Pages

Tuesday, March 28, 2017

বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান........


বর্তমান বিশ্বে মুসলমানগণ খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তাঁরা মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এসব বিষয়ে অমুসলিমদেরই নাকি অবদান। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার ইতিহাসটা কি? এটা মুসলমানদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আর এমন কিছু ্ইতিহাস নিয়েই আজকের এ লেখা। মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।
বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ছিল মুসলমানদের অনেক অবদান। বিশেষত বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের ছিল সবচেয়ে বেশি অবদান। মুসলমান বিজ্ঞানীরা মনে করতেন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এ তিনটি শাখার উপর জ্ঞ্যান অর্জন করা আবশ্যক। এ তিনটি শাখা হচ্ছে প্রথম- মহাকাশ বিজ্ঞান, দ্বিতীয়- গণিত, তৃতীয়- চিকিৎসা বিজ্ঞান।

মহাকাশ বিজ্ঞান প্রয়োজন- চাঁদ এবং সূর্যের হিসাব নিকাশ বুঝতে। যেহেতু চাঁদের হিসাবটা বিশেষ বিশেষ দিন এবং বিশেষ বিশেষ মাস বের করা প্রয়োজন। আর সূর্যের হিসাবটা নামাযের ওয়াক্ত এবং অন্যান্য বিশেষ ওয়াক্ত বের করার জন্য প্রয়োজন।

আর গণিতটা প্রয়োজন- গণিত ছাড়াতো মহাকাশ বিজ্ঞান চিন্তাই করা যায়না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করাও সুন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য হিসাব করতে গণিত লাগে। আবার ফারায়েজের মাসয়ালা অর্থাৎ সম্পত্তি বন্টনের জন্যও গণিত প্রয়োজন। আবার মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নামায শেষ হওয়ার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর।” কোথাও যেতে হলে ম্যাপের দরকার। ম্যাপটা হলো ভূগোলের অংশ আর ভূগোলটা জ্যামিতির অংশ, জ্যামিতিও ওই গণিতের অংশ। ঐ আবার গিয়ে গণিতই লাগে।
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানটা প্রয়োজন, কারণ চিকিৎসা করা সুন্নত। সুতরাং এ সুন্নত পালনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করার প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা না করা হয় তাহলে চিকিৎসার সুন্নতটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর একটা সুন্নতকে বিলুপ্ত করার মতো কবীরা গুণাহতো আর কিছু হতে পারেনা। এছাড়াও জান বাঁচানোতো ফরয। সূতরাং সে ফরয আদায়ের জন্যও তো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞান যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু মুসলমানরা মহাকাশ বিজ্ঞানটা শেখার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানটাও চর্চা করতেন। আবার যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে রসায়ন একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত সেহেতু মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানটা শেখার জন্য রসায়নটাও চর্চা করতেন। যার কারণে এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে মুসলমানদের অনেক বেশি অবদান ছিল। এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার ইতিহাস পড়লেই এগুলো জানা যাবে।
আমরা তাহলে দেখতে পারলাম- গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ পাঁচটা শাখার উপর মুসলমানদের খুব বেশি অবদান ছিল।  কি ধরণের অবদান ছিল সে বিষয়েও আমাদের  জানা প্রয়োজন। যেমন-
গণিতে মুসলমানদের অবদানসবচেয়ে বেশি । আর গণিতের শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার। যেমন- প্রথমেই যেটা আসে সেটা হচ্ছে, আমরা যে সংখ্যা গুণি, ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯।   এই সংখ্যার যে এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ (১০) হয়; এটাই মুসলমানদের আবিষ্কার। এটা আবিষ্কার করেছেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী। উনিই প্রথম বলেছেন যে, এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ হয়। এর আগে যেগুলো ছিল ওগুলি অনেক কঠিন ছিল। যেমন- রোমান সংখ্যা। তাদের সংখ্যা ছিল এক, পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ, এক’শ, পাঁচ’শ, এক হাজার, পাঁচ হাজার এরকম সংখ্যা। এগুলোর সাথে যোগ বিয়োগ করে আমি যেটা চাই সেটা বানিয়ে নিতে হতো। আর ইন্ডিয়ান সংখ্যাটা যেরকম ছিল- এক থেকে নয় পর্যন্ত নয়টা সংখ্যা, আবার দশ থেকে নব্বই পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা, আবার একশ থেকে নয়শ পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা। এরকম অনেক সংখ্যা। তো ইন্ডিয়ান সংখ্যা কিছুটা সোজা হলেও সংখ্যা এতো বেশি যে সংখ্যা মনে রাখতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মূসা আল খারিজমী উনি সুন্দর একটা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন যে, একের পর শূন্য দিলেই দশ হয়ে যায়। দশ সংখ্যাই অংক শেষ।
তারপরে আবার বীজ গণিত। এটাও মূসা আল খারিজমী উনারই আবিষ্কার। উনাকে অবশ্য মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গণিতবীদ হিসেবে ধরা হয়। এই আধুনিক বীজ গণিত যেটা, এটা উনিই আবিস্কার করে দিয়ে গেছেন। এর আগে যে বীজ গণিত ছিল সেগুলো এতো জটিল যে, আসলে বুঝাটা খুবই কঠিন। উনি যেটা আবিস্কার করে দিয়েছেন এটা খুবই সোজা এবং এখ পর্যন্ত এটাই চলে আসতেছে। বীজ গণিত ইংরেজী হচ্ছে এ্যালজেবরা। এ শব্দটাওতো আগে থেকে আসছে। মূসা ইবনে খারিজমী যে বইটা লিখেছিলেন সেটা হচ্ছে,
তারপরে দ্বিঘাত সমীকরণ; এটাও আবিস্কার করেছেন মুসলমানরা। তারপরে দ্বিপদী উপপাদ্য; এটাও প্রথম দেন মুসলমানরা। আবু বক্বর ইবনে হুসাইন আল কারাজি প্রথম এই দ্বিপদী উপপাদ্যটা দেন। পরবর্তীতে ওমর খাইয়াম আবার এই দ্বিপদী উপপাদ্যটার উপর আরো কাজ করেন এবং উনি এই দ্বিপদী উপপাদ্যের মাধ্যমেই যেকোন সংখ্যার যেকোন তম রুট বের করার একটা পদ্ধতি বের করেন। পরবর্তীতে পদ্ধতিটা হারিয়ে যায় তবে উনি যে এই পদ্ধতিটা বের করেছিলেন এটা অন্যান্য মুসলমান বিজ্ঞানীদের বইয়ে এই পদ্ধতিটা পাওয়া যায়। আর বীজগণিতের উপর যত অবদান সবই মুসলমানদের। যেমন বীজ গণিতের মধ্যে ‘পাওয়ার’এর যে সিস্টেমটা; এটাও মুসলমানদেরই আবিস্কার। আবু কামিল নামে একজন মুসলমান গণিতবিদ ছিলেন উনি এটা প্রথম চালু করেন। পাওয়ার, রুট এগুলোর সিস্টেম। তারপরে অংকের যে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এই চিহ্ণগুলিও মুসলমানদেরই দেয়া। এই চিহ্ণগুলি আবিস্কার করেছিলেন, আবুল হাসান ইবনে আলী কালাসাদি।



তারপরে ত্রিকোণমীতি; এটার উপরেও মুসলমানদের অনেক অবদান। রোমানরা ত্রিকোণমীতি প্রথম আবিস্কার করে কিন্তু রোমানরা ত্রিকোণমীতির যে ব্যাখ্যা দিত, সে ব্যাখ্যা শুনে মানুষ ত্রিকোণমীতি বিমুখ ছিল। পরবর্তীতে মুসলমান একজন গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে জাবির আল হারানী ওয়াল বাত্তানী তিনি প্রথম ত্রিকোণমীতি সম্পর্কে সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। যারফলে আবার সবাই ত্রিকোণমীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। উনি অনেকগুলো ত্রিকোণমীতির ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন একটা ফর্মুলা আছে ‎ten=sin/cos আবার ‎ten এর টেবিলটাও মুসলমানদের আবিস্কার করা। এটা আবিস্কার করেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী।
তারপরে এ্যালগরিদম তৈরী করার পদ্ধতিটাও মুসলমানদেরই করা। আবু জাফর মুহম্মদ মূসা ইবনে আল খারিজমী প্রথম এটা আবিস্কার করেন। এই এ্যালগরিদমের ফর্মুলাটা প্রয়োগ করেই কম্পিউটারের ক্যালকুলেশনের লজিকটা তৈরী করা হয়। এক কথায় আসলে বর্তমানে কম্পিউটারের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদেও অবদান রয়ে গেছে। উনি যদি এ্যালগরিদম তৈরীর পদ্ধতিটা আবিস্কার না করতেন তাহলে হয়তো বর্তমানে কম্পিউটার আবিস্কার নাও হতে পারতো।
‘কিতাবুল জাবির ওয়াল মুকারাবা’। ঐ আল জাবিরটাকেই পরে তারা বানিয়ে ফেলছে এ্যালজাবরা(algebra)।

Monday, March 27, 2017

চিকিৎসা ও রসায়ন শাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান !



সমগ্র বিশ্ব যখন নানা কুসংস্কারে ও পাপে নিমজ্জিত ছিল। বিশ্বের মানুষ যখন নানা অনাচারে গুমরে মরছিল এবং অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল তখনই ইসলাম শান্তি ও সভ্যতার আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। তৎকালীন বিশ্বকে বিশেষ করে আরববাসীকে অধঃপতনের অন্ধকূপ হতে তুলে সম্মানিত ও উচ্চতম স্থানে স্থাপন করেছিল মুসলিম মনীষীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বারাই।

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান :
৯ম শতাব্দীতে মুসলিম মনীষীগণই সভ্যতার প্রকৃত পতাকা বাহক। বিদেশী গ্রন্থাদির ভাবধারার সাথে আপন চিন্তাধারার সমাবেশ করে তারা এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। খলিফা মামুন অনুবাদ কার্যের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিভাগ খুলেছিলেন। তিনি বাগদাদে যে বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাতে একটি অনুবাদ বিভাগও ছিল। আর এই অনুবাদের জন্য খলিফা কোনো রকম বৈষম্য সৃষ্টি না করে বিভিন্ন জাতি হতে লোক নিযুক্ত করতেন।

এসব লোকের গবেষণার ফলে ব্যাকরণ, অলংকার শাস্ত্র, ভাষাতত্ত্ব, ভূগোল, ইতিহাস, রসায়ন শাস্ত্র, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতি শাস্ত্র এককথায় জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রত্যেক শাখা প্রশাখার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল।

৯ম শতাব্দী হতে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল মুসলিম মনীষীদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের জন্য স্বর্ণ যুগ। এ শতাব্দীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল আবু আলী আল হুসাইন ইবনে সিনা। ইসলামের অন্যতম এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী সমগ্র ইউরোপ জুরে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন যে, তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হত। তিনি বুখারার নিকটবর্তী আফসানা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর আল-কানুন ফিততিব নামক গ্রন্থ রচনা করে সু-পরিচিতি লাভ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছাড়াও ইবনে সিনা ছিলেন দার্শনিক, গণিতজ্ঞ, ভাষাতত্ত্ববিদ, কবি ও সাহিত্যিক।

ইবনে সিনা বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় ১২৫টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তার কিতাব আল-সিফা দর্শনের উপর একটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এটা ৮টি খণ্ডে বিভক্ত ছিল। মধ্যযুগের ইউরোপে এটা একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হত।

মুসলিম খলিফাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম বিজ্ঞানের েেত্র যে উন্নতি সাধিত হয় তা হলো চিকিৎসা শাস্ত্র। উমাইয়া খলিফাগণ চিকিৎসা শাস্ত্রকে উৎসাহিত করলেও মূলত আব্বাসীয় আমলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকৃত উন্নতি হয়। এ যুগে অনেক অনুবাদক ও চিকিৎসক চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর নতুনভাবে আলোকপাত করেন। এ ভাবে তারা তাদের মৌলিক চিন্তা-ধারার স্বার রেখে গেছেন।

খলিফা আল মনসুরের রাজত্বকালে গ্রিক বিজ্ঞানের অনুবাদ কার্য জুন্দিশাপুর কলেজে পূর্ণোদ্যমে আরম্ভ করা হয়। জুন্দিপুরের প্রধান চিকিৎসাবিদ ছিলেন বখত ইসু। তার পুত্র জুরদাসকে খলিফা আল মনসুর তার দরবারে আমন্ত্রণ জানান। ইতিহাসের কালক্রমে এ বখত ইসু-এর পরিবার বাগদাদে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করে এবং আড়াই শতাব্দী ধরে খলিফাদের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে। তার পর আস্তে আস্তে আরো চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি সাধিত হয়। যা এক সময় শুরুই করেছিলেন মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ।

ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীর উন্নতি ঃ রোগ নিরাময়ে ঔষধ প্রয়োগ ব্যবস্থায় আরবগণ বিশেষ অগ্রগতি সাধন করেন। আর্তমানবতায় মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ সমগ্র পৃথিবীতে রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করেন। মূলত তারাই ঔষধ প্রস্তুত ও ঔষাধালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ভেষজ বিজ্ঞান সংক্রান্ত গ্রন্থাদি প্রকাশ করেন। খলিফা আল মামুন ও মুতাসিমের আমলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।

History and life G ejv nq Well equipped hospitals usually associated with medical schools were located in prinicipal cities through out the muslims empire.

অনুবাদ কার্য আরম্ভ হলে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর অনেক গ্রিক ও অন্যান্য বিদেশী গ্রন্থ অনুদিত হয়। হুসাইন বিন ইসহাক নামক একজন আরবীয় খৃষ্টান হিপোক্রাটসের সাতখানা বই গ্যালেন ও পলের রচনাদি, ভিসকোরা ইউসের মেটারিয়া মেডিকো প্রভৃতি গ্রন্থাবলী অনুবাদ করেন। তার পুত্র ইহসাক ইসা বিন ইয়াহ ইয়া ও কুস্তইবনে লুকাত চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ৮২০ খৃষ্টাব্দ থেকে ৯০১ খৃস্টাব্দ যাবিত বিন কুবরা হাররানে স্বাধীন ভাবে কাজ করতেন এবং মাথা বুক প্রভৃতি রোগের উপর পুস্তক প্রকাশ করতেন বা করেন।

মুসলিম মনীষীগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি, শৈল চিকিৎসা, হাম বসন্ত রোগেরও চিকিৎসা করেছেন। অনুরূপ ভাবে চু চিকিৎসার েেত্রও মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। যা আজো পৃথিবীর বুকে ইতিহাস হয়ে আছে।

আলী আত তাবারী : মৌলিক গবেষণায় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে সকল নাম সমধিক প্রসিদ্ধ হয়েছে তাদের মধ্যে আত তাবারী, আল রাযী, আলী বিন আব্বাস ও ইবনে সিনা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। আলী আত তাবারী ছিলেন মুসলিম খলিফা মুতাওয়াক্কিলের গৃহ চিকিৎসক। তিনি খলিফার পৃষ্ঠপোষকতায় “ফেরদৌস উল হিকমা’ একখানা বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে শুধু চিকিৎসা শাস্ত্রই নয়, দর্শন, জ্যোতি বিজ্ঞান ও প্রাণিবিদ্যা সম্বন্ধেও আলোচিত হয়েছে। এটা গ্রিক, ইরানী ও ভারতীয় শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

আল রাযী : মুসলিম চিকিৎসাবিদদের মধ্যে আবু বকর মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল রাযী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একজন চিকিৎসাবিদ। তিনি গ্রিক, পারসিক ও ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ হুসাইন বিন ইসহাকের ছাত্র ছিলেন।

মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী আল রাযী প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। আর এর অর্ধেকই ছিল চিকিৎসা শাস্ত্র সম্বন্ধীয় বসন্ত ও হাম সম্পর্কীয়। তার জগত বিখ্যাত গ্রন্থ আল-জুদারী আল হাসাবাহ প্রথমে ল্যাটিন ও পরে ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য তার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো “আল হাভী” এটা মোট বিশ খণ্ডে লিখিত।

মুসলিম মনীষী আল রাযী বাগদাদ হাসপাতালের (বিমারিস্থান) প্রধান চিকিৎসক ছিলেন। অস্ত্রোপাচারে তিনি সিটরের আবিষ্কার করেন। চিকিৎসা শাস্ত্র ছাড়াও তিনি ধর্মতত্ত্ব, অংকশাস্ত্র প্রভৃতি বিজ্ঞান ও জ্যোতি বিজ্ঞানের উপরও বহুগ্রন্থ লিখেছেন।

আলী বিন আব্বাস : আলী বিন আব্বাস পারস্যের জরোষ্ট্রীয় বংশোদ্ভূত মুসলমান ছিলেন। তিনি আল কিতাব আল মালিক নামে যে বিশ্বকোষ লিখেছেন তা ল্যাটিন জগতে Liber Regius নামে পরিচিত।

উক্ত গ্রন্থে ঔষধের সূত্র ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। তখনকার বুয়াইশ শাসক আযদদ্দৌলার নামে এ গ্রন্থ উৎসর্গিত হয়েছিল যা ল্যাটিন ভাষায় মোট দুইবার অনূদিত হয়। আবু আলী হুসাইন বিন সিনা তার যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি ইউরোপে আভিসিনা নামে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর তার বিখ্যাত গ্রন্থ কানুনুল হিকমাহ আরব জগৎ হতে ইউরোপে আনিত সর্বাধিক প্রভাবশালী গ্রন্থ। একে চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইবেল বলে।

ইবনে সিনার কানুন সম্পর্কে অধ্যাপক হিট্রি বলেন, কানুনের আরবি সংস্করণ ১৫৯৩ সালে রোমে প্রকাশিত হয়েছিল। এবং এটা একটি প্রারম্ভিক যুগের মুদ্রিত গ্রন্থ। আরবি চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার স্থান অদ্বিতীয়। আবুল কাসেম (আল বুকাসিম) রচিত ‘আত তাসরিক’ ইউরোপে অস্ত্রোপাচার প্রবর্তনে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিল।

ইবনে রুশদ আর একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি মুসলমানদের উদ্ভাবিত ঔষুধ প্রস্তুত বিদ্যায় বিশেষ দ ছিলেন। তিনি অনেক রোগের প্রতিশেধকও আবিস্কার করেন। এ ছাড়াও তিনি অনেক চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান রেখেছিলেন।

মুসলমান শাসকগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য মুসলিম, অমুসলিম সকলকেই উদারভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তারা স্থায়ী চিকিৎসা নিরাময়ের জন্য হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। অপর দিকে মুসলিম হাসপাতালে নারীদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা ছিল।

রোগ নির্ণয় বিদ্যা মুসলিম শাসন আমলে উন্নতির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তেমনি ভাবে চু চিকিৎসা শাস্ত্র ও মুসলমানদের নিকট বিশেষভাবে ঋণী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য বসরার আবু আলী হুসাইন আল হিশাম প্রথম সিদ্ধান্ত নেন যে আলোক রশ্মি বাইরের বস্তু হতে চুতে আসে, চু হতে বস্তুতে যায় না।

রসায়ন শাস্ত্রে মনীষীদের অবদান : চিকিৎসা শাস্ত্র, জ্যোতি শাস্ত্র, গণিত ও ভূগোল শাস্ত্রের পর মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ অবদান হলো রসায়ন শাস্ত্র। আরবরা আধুনিক শাস্ত্রের আবিষ্কারক। রসায়ন শাস্ত্রকে আরবরা আল কিমিয়া বলত এবং তা হতেই মসূল আল কেমী কেমিস্ট্রি শব্দ উদ্ভব হয়েছে। যা বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে রসায়ন শাস্ত্র নামে পরিচিত।

খালিদ বিন ইয়াযিদ মাবিয়া হতে আল কেমী বা রসায়ন শাস্ত্রের আরম্ভ হয়। তিনি ছিলেন আরবদের মধ্যে প্রথম রসায়নবিদ। কিন্তু আব্বাসীয়দের আমলে মুসলমান বৈজ্ঞানিকগণ এ বিজ্ঞান শাস্ত্রের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন। ‘মি. হামবোল্ট বলেন, আধুনিক রসায়ন শাস্ত্র মুসলমানদেরই আবিষ্কার বলা যায় এবং এ দিক দিয়ে তাদের কৃতিত্ব অদ্বিতীয়।

মুসলিম বিজ্ঞানীগণ প্রাচীন রসায়নের অসারতা প্রমাণ করেন। তারা পারস্য, সীসা, তাম্র, রৌপ্য ও স্বর্ণের রাসায়নিক স্বাদৃশ্যের সন্ধান করেন। তারা ধাতুর সাথে অম্লজান মিশ্রণ ও হিসাব নিরূপণের জন্য রাসায়নিক পদ্ধতি সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন, মুসলিম মনীষীগণই পৃথিবীকে সর্বপ্রথম পাতন পরিশ্রাবণ ও স্বচ্ছকরণের শিাদান করেন। তারা তরল পদার্থকে বাম্পে পরিণত করতে জানতেন।

জাবির ইবনে হাইয়ানকেই বলা হয় আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের জনক। যিনি পাশ্চাত্যে জাবের নামে সুপরিচিতি লাভ করেছেন। মধ্যযুগের রসায়ন শাস্ত্রে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ আসনের অধিকারী। তিনি প্রাচীন রসায়নবিদদের তুলনায় অধিক মননশীলতার পরিচয় দেন। জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রে সূত্রও ব্যবহারের বিশেষ উন্নতি বিধান করেন।

চতুর্দশ শতাব্দীর পরে জাবির ইবনে হাইয়ানের রচনাবলী এশিয়া ও ইউরোপে রসায়ন শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য নিবন্ধ হিসেবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সম হয়। তিনি রসায়ন শাস্ত্রের উপর প্রায় ৫০০ গ্রন্থ রচনা করেন। আর ২২টিরও বেশি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন।

তার এ সকল গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো-

১. কিতাব আল রাহমা কৃপার পুস্তক

২. কিতাব আল তাজমী = খর্বকরণ

৩. কিতাব আল জিবাক

৪. কিতাব আল সারকী প্রতীচ্যের পারদ ইত্যাদি গ্রন্থাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া তিনি লুঘুকরণ, বাষ্পীয় কারণ, তরলী করণ, সপটি করণ ইত্যাদি সূত্র এই মহান মুসলিম মনীষীদের আবিষ্কারের ফল। তিনি বিভিন্ন সূত্রকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা করে উন্নতি সাধন করেছিলেন।
 

Blogger news

Blogroll

About