এই ধরেন কেও যদি বোকাসোকা ধরণের হয় আমরা তাকে বলে ফেলি , তোমার মাথায় কি গোবর আছে? কিংবা তোমার মাথা গোবরে ভরা৷
মজার বিষয় হলো মাথায় কিন্তু গোবর থাকেনা ব্রেইন থাকে৷ আর মানুষের মস্তিষ্কের
60% ই আবার চর্বি৷ সো আপনি এটা বলতে
পারেন যে তোমার মাথা তো চর্বিতে ভরা৷
মস্তিষ্ক নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কথাগুলোর একটি হচ্ছে, আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ১০ ভাগ ব্যবহার করি। কথাটি সম্পূর্ণ
ভুল। আমরা আমাদের মস্তিষ্কের পুরোটাই ব্যবহার করি। এমনকি ঘুমের সময়ও আমাদের মস্তিষ্ক
কার্যকর থাকে। তবে হ্যাঁ, আমরা চর্চার মাধ্যমে আমাদের
মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়াতে পারি।
যখন প্রয়োজনীয় পুস্টি পায় না তখন মস্তিষ্ক কোষগুলো নিজদের ধ্বংস করে ফেলে। আমরা
যখন অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার নিয়ন্ত্রণ করি,
যেটাকে সবাই
ডায়েট বলে, তখন এটা বেশি ঘটে। সুতরাং ডায়েট
করার আগে সতর্ক থাকুন।
প্রতিনিয়ত চেপে ধরা হতাশা এবং মানসিক অবসাদ মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত করে তোলে। আমরা আধুনিক
যে ফাস্টফুড খাই তাতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে না। এটি মস্তিষ্কের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
নিয়মিত এই ধরনের খাবার খেলে মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
বাচ্চাদের আমরা অনেক সময়ই বলি, এই থাম তো! তোর এখনো বোঝার
বয়স হয়নি। ২ বছর বয়সে মস্তিষ্ক ৮০ ভাগ পূর্ণতা পায়। সম্পূর্ণ পূর্ণতা পেতে ২৫ বছর লেগে
যায়। সুতরাং আপনি দুই-তিন বছর বয়সের বাচ্চার সামনে যা না তা-ই বলবেন আর ভাববেন সে কিছু
বোঝে না, তাহলে কিন্তু ভুল ভাবছেন। বাচ্চারা
সব বোঝে!
আমাদের মস্তিষ্ককে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য একটি পর্দা রয়েছে যার নাম ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার।
রক্ত থেকে মস্তিষ্কে কী যাবে তা নিয়ন্ত্রণ করে এই পর্দা। ক্ষতিকর পদার্থ এই পর্দা ভেদ
করে সাধারণত যেতে পারে না। তবে নিকোটিন কিংবা অ্যালকোহলকে বাধা দিতে পারে না সে।
একটি গমের দানার সমপরিমাণ মস্তিষ্ক টিস্যুতে ১ লক্ষের মতো নিউরন থাকে, যেগুলো পরস্পরের সাথে এক বিলিয়ন বন্ধন তৈরি করে। তাহলে মোট নিউরনের
সংখ্যা কত? নিখুঁত হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি।
তবে বিজ্ঞানিদের ধারণা, সেটা ৮৬ বিলিয়নের কম না।
এদের সবাই একরকম তা নয়। প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন রকম নিউরন রয়েছে।
মস্তিষ্ক টিস্যু কিন্তু অক্সিজেনের উপরে খুবই নির্ভরশীল। পাঁচ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ
বন্ধ হয়ে গেলে নিউরন মারা যাওয়া শুরু করে। আর নিউরন মারা গেলে সাধারণত তার জায়গা নেয়ার
জন্য নতুন কোনো নিউরন তৈরি হয় না। ধূমপান এই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করার জন্য দায়ী
কিন্তু৷
মস্তিষ্কের মোট ওজন তিন পাউন্ডের মত। সারা শরীরের সাথে তুলনা করলে আমাদের শরীরের
মোট ওজনের মাত্র দু’ভাগ দখল করে আছে মস্তিষ্ক। কিন্তু খরচের বেলায় সে মুক্তকচ্ছ। আমরা
যে খাদ্য গ্রহণ করি তার শতকরা ২০ শতাংশ একাই খরচ করে। এই খাদ্য এবং অক্সিজেন পৌঁছে
দেওয়ার জন্য ১,০৪০-৮০ লিটার রক্ত পরিবাহিত হয়
চব্বিশ ঘণ্টায়।
সে কি শুধু খরচ করে? উহু, একদম নয়। প্রতিদিন মস্তিষ্কে ১২ থেকে ২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন
করে। লো ভোল্টেজের LED জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট
নয় কি?
মস্তিষ্কের অধিকাংশই পানি। পরিসংখ্যানে আনলে দাঁড়ায় ৭৩ শতাংশের মত। বাকি সাতাশ
ভাগের ৬০ ভাগই আবার চর্বি। সত্যি বলতে কী,
আমাদের দেহের
সবচেয়ে ফ্যাটি অংশ এই মস্তিষ্কই। চর্বির কথা আরেকটু বলতে গেলে, আমরা সবসময় কোলেস্টেরল ছাড়া খাবার খুঁজি। কিন্তু শরীরের মোট
সঞ্চিত কোলেস্টেরলের ২৫ ভাগ মানে প্রতি চার ভাগের এক ভাগই মস্তিষ্কের কোষে থাকে। এই
কোলেস্টেরল এতই অত্যাবশ্যকীয় যে এগুলো ছাড়া নিউরন (স্নায়ু কোষ) মারা যাবে।
বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে
মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কে পানির পরিমাণ কমে গেলে আমরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারি না। দুই শতাংশ
কমে গেলেই আমাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ
ক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
0 comments:
Post a Comment