জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা যায় না, সৃষ্টিতথ্য বোঝা যায় না, পরমস্রষ্টাকে চেনা যায় না, ক্ষমতাধর হওয়া যায় না
এবং নেতৃত্ব দেয়া যায় না। খ্রিস্টিয় ৭ম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের
প্রতিটি শাখায় মুসলমানেরা ছিল সর্বেসর্বা। আল-কোরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান
বিষয়ক সকল প্রকার বই পড়েছেন, গবেষণা করেছেন। তারা
মহান স্রষ্টার সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দেশনাবলীর ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছেন।
আÍশুদ্ধি ঘটিয়েছেন। যাবতীয়
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছেন এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ইবনে আল হাইসাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি সর্বপ্রথম জড়বস্তু ও আলোর প্রতিসরণ তত্ত্ব প্রদান করেন।
পরবর্তীতে যা নিউটনের হাতে পুনরাবিষ্কৃত হয়। জাবির বিন হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি
রচনা করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনা, জাবির হাসান বিন হাইয়ান, আল রাজির নাম উল্লেখযোগ্য।
তাদের লিখিত বইয়ের ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।
কম্পিউটারের আবিষ্কার কিন্তু অঙ্ক শাস্ত্রনির্ভর।
বস্তুত ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাণ’ আল খাওয়ারেযমীই প্রথম প্রণয়ন করেছিলেন। নিউটনের বহু
আগে কবি ওমর খৈয়াম ‘বাইনোমিয়াল থিউরাম’ আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর প্রথম সম্পর্ণ মানচিত্র
প্রণয়ন করেন মুসলিম ভুগোলবিদ ইবনে হাক্কল। আল ফারাবি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
ভাষাবিদ ও দার্শনিক। তিনি ৭০টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আল বিরুনি এবং ইবনে বতুতা প্রমুখ
মুসলিম মনিষী ভূবিদ্যার প্রসারে অনেক অবদান রেখে গেছেন। ইবনে খালদুনকে বলা হয় ইতিহাস, দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞানের জনক। বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ইবনে
জাবির তাবারি। ‘তারিখ আল রাসূল ওয়া আল মুলুক’, তাঁর এ গ্রন্থটি সারাবিশ্বে রেফারেন্স হিসেবে গঠিত হচ্ছে। আল কিন্দি গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৩৬৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। অতীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান
প্রযুক্তিতে নয় বরং ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্প, কল-কারখানাতে মুসলমানদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ
অবদান।
আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারুল
হিমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়
হয়েছিল।
যখন খ্রিস্টীয় সমাজে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের
ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত
হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রিক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা
ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন। যেমন আজকের দিনে মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার
জন্য বৃটেনে, আমেরিকা যায়। ‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’
বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের
কোনো অস্তিত্ব ছিল না, বহু মুসলিম দেশে তখন
প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমা’য় ৪০ লাখ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লাখ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লাখ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের
সময়ে শুধু স্পেনে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো।
0 comments:
Post a Comment