Pages

Friday, September 7, 2018

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান


Image result for বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান
জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা যায় না, সৃষ্টিতথ্য বোঝা যায় না, পরমস্রষ্টাকে চেনা যায় না, ক্ষমতাধর হওয়া যায় না এবং নেতৃত্ব দেয়া যায় না। খ্রিস্টিয় ৭ম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানেরা ছিল সর্বেসর্বা। আল-কোরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক সকল প্রকার বই পড়েছেন, গবেষণা করেছেন। তারা মহান স্রষ্টার সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দেশনাবলীর ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছেন। আÍশুদ্ধি ঘটিয়েছেন। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছেন এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ইবনে আল হাইসাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি সর্বপ্রথম জড়বস্তু ও আলোর প্রতিসরণ তত্ত্ব প্রদান করেন। পরবর্তীতে যা নিউটনের হাতে পুনরাবিষ্কৃত হয়। জাবির বিন হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি রচনা করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনা, জাবির হাসান বিন হাইয়ান, আল রাজির নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের লিখিত বইয়ের ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।
কম্পিউটারের আবিষ্কার কিন্তু অঙ্ক শাস্ত্রনির্ভর। বস্তুত ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাণ’ আল খাওয়ারেযমীই প্রথম প্রণয়ন করেছিলেন। নিউটনের বহু আগে কবি ওমর খৈয়াম ‘বাইনোমিয়াল থিউরাম’ আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর প্রথম সম্পর্ণ মানচিত্র প্রণয়ন করেন মুসলিম ভুগোলবিদ ইবনে হাক্কল। আল ফারাবি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও দার্শনিক। তিনি ৭০টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আল বিরুনি এবং ইবনে বতুতা প্রমুখ মুসলিম মনিষী ভূবিদ্যার প্রসারে অনেক অবদান রেখে গেছেন। ইবনে খালদুনকে বলা হয় ইতিহাস, দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞানের জনক। বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ইবনে জাবির তাবারি। ‘তারিখ আল রাসূল ওয়া আল মুলুক’, তাঁর এ গ্রন্থটি সারাবিশ্বে রেফারেন্স হিসেবে গঠিত হচ্ছে। আল কিন্দি গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৩৬৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। অতীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে নয় বরং ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্প, কল-কারখানাতে মুসলমানদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারুল হিমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল।
যখন খ্রিস্টীয় সমাজে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রিক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন। যেমন আজকের দিনে মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য বৃটেনে, আমেরিকা যায়। ‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’ বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, বহু মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমা’য় ৪০ লাখ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লাখ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লাখ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের সময়ে শুধু স্পেনে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো।

Tuesday, September 4, 2018

দুনিয়া কাঁপানো বাংলাদেশী মুসলিম বিজ্ঞানী


                          No automatic alt text available.
================================================
কলেরার কারণ আবিষ্কার (ডাক্তার শাহ এম ফারুক)
ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি’র আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন।
যখন বিশ্বব্যাপী কলেরার কারণ হিসেবে নতুন ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে দায়ী বলে ধারনা করা হচ্ছে তখন গবেষক দলটি এ সাফল্য অর্জন করল। তারা বলছে, ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া ভিবিরিও’র সংস্পর্শে এসে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে।
ড. শাহ ফারুক
তিনি ২০০৫ সালে উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে (TWAS Prize-2005) সর্বোচ্চ পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর গবেষণার মান পৃথিবীর ঐ সমস্ত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন হার্ভার্ড, কেমব্রীজ) বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (NIH) কর্মরত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে তুলনীয়। সম্প্রতি (২০১০) তার গবেষণালব্ধ তথ্য বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা সায়েন্টিফিক জার্নাল নেচার (Nature)-এ প্রকাশিত হয়েছে।
স্পেকট্রোমিটার (ডঃ আনিসুর রাহমান)
মানুষের শরীরের বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করার যন্ত্র স্পেকট্রোমিটার। এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে এতদিন এই পরীক্ষা করা হত। এই স্পেকট্রোমিটারের সাহায্যে এখন আরও সহজে এই বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করা যাবে। এই স্পেকট্রোমিটারের আবিস্কারক বাংলাদেশের একজন সফল বিজ্ঞানী ডঃ আনিসুর রাহমান। মানবদেহে বিস্ফুরক জাতীয় উপাদান সনাক্ত করার জন্য অনেক দিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরে গবেষণা চলছিল।
ডঃ আনিসুর রাহমান
ড. আনিসুর রহমানের বাড়ি বাংলদেশের পাবনায়। দেশে অবস্থানকালে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আণবিক বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ও ড. শমসের আলীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে তিনি ছিলেন সায়েন্টিফিক অফিসার।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউসকনসিনে অবস্থিত মার্কেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর পেনসিলভেনিয়ার এপ্লাইড রিচার্স ফটোনিক্স কোম্পানির সিইও হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
সোলার এনার্জি সেলস (ড. জামালউদ্দিন)
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির নেনোট্যাকনোলজি রিচার্স সেন্টারের গবেষক ডঃ জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিশ গবেষকরা স্পেক্ট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায় প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।
প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার এনার্জি সেল তৈরির শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রোল্যাব। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার সেল তৈরির সুনামটিও তাদের। নিজের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়াতে ডঃ জামালউদ্দিন জানান, এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর এবং আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় যা আরো অধিক নেনোট্যাকনোলজির ওপর গবেষণাকল্পে আমাদের আরো উৎসাহ যোগাবে।
ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। ড. জামাল মেটাফিজিঙ্ক সফট ওয়ার-কমসল এবং পিসি-ওয়ান ডি ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন।
উলের প্রোটিন থেকে চিকিৎসা পদ্ধতি (আজম আলী )
আজম আলী উলের প্রোটিন থেকে এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, যার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ ও রাসায়নিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর ত্বক ও গোশতপেশীর আরোগ্য সম্ভব। আগুনে মানুষের শরীরের ত্বক ও গোশত উভয়ই ঝলসে যায়। বাজারে যে ওষুধগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো শুধু ক্ষত স্থানের ত্বকই তৈরি করে। আর আজম আলী কাজ করেছেন উল নিয়ে। উলে কেরাটিন নামের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনটা মানুষের নখ ও চুলেও পাওয়া যায়। তিনি নিউজিল্যান্ডে পাঁচ বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ করেছেন। এই কেরাটিনকে রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করে তিনি কেরাজেল, কেরাডাম ও কেরাফোম তৈরি করেছেন। ক্ষত স্থানে এগুলো ব্যবহার কররে শুধু ত্বকই নয়, গোশতপেশির টিস্যুও তৈরি করবে। তা ছাড়া তুলনামূলক ৪০ গুণ দ্রুত কাজ করবে এটা।
আজম আলী একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। ১৯৬৭ সালের এপ্রিলে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে (বর্তমান নাম সেতাবগঞ্জ) আজম আলীর জন্মগ্রহণ করেন।
রেকডি (জেনেটিক রিকম্বিনেশনের জিন) (আবেদ চৌধুরী)
আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়লজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন,যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়।
সংকর ধাতু উদ্ভাবন (আব্দুস সাত্তার খান)
তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
আব্দুস সাত্তার খান ১৯৪১ – ৩১শে জানুয়ারি, ২০০৮ বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহাকাশ গবেষক। কর্মজীবনে তিনি নাসা, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের প্র্যাট এন্ড হুইটনি এবং অ্যালস্টমে (সুইজারল্যান্ড) কাজ করেছেন।
পাটের জিন নকশা (ড. মাকসুদুল আলম )
২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণার সূত্রপাত। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যোমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন। ড. মাকসুদুল আলম একজন বাংলাদেশী জিনতত্ত্ববিদ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা। ২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের ঘোষণা দেন।
ড. মাকসুদুল আলমের জন্মঃ ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৫৪ ঢাকাতে। পেঁপের জিননকশা উন্মোচনের কারণে মাকসুদুল আলম ‘নেচার সাময়িকীর’ প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন। এভাবেই শুরু হলো মাকসুদুল আলমের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হওয়ার অধ্যায়।
পাট থেকে পাটকাঠি এবং পাটকাঠি থেকে রেয়ন (ড.কুদরাত-এ-খুদা )
ড.কুদরাত-এ-খুদা গবেষণার প্রথম দিকে স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষ্ণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
কুদরাত-এ-খুদা বাংলাদেশের প্রথমসারির একজন বিজ্ঞানী। কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেম। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতা ফাসিহা খাতুন। ড.কুদরাত-এ-খুদা ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যু বরন করেন।
সোনো ফিল্টার’ (অধ্যাপক আবুল হুসসাম) 
অধ্যাপক আবুল হুসসাম একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তিনি এবং তার ছোট ভাই ডক্টর আবুল মুনির দু’জনে মিলে তৈরি করেন ‘সোনো ফিল্টার’ নামে এই খাবার পানি থেকে আর্সেনিক নিষ্কাশন করার যন্ত্র। তাদের তৈরি এই যন্ত্র টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে।
প্রথমদিকে ডক্টর হুসসাম তৈরি করেন বেশ কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রোকেমিক্যাল এনালাইজার, অটোমেটেড টাইট্রেশন সিস্টেম এবং বেশ মূল্যবান এক ধরনের গ্লাস ক্রোমাটোগ্রাফ যার মাধ্যমে তিনি জটিল কোন ধরনের মিডিয়াতে প্রবাহিত পদার্থের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন । তার এই আবিষ্কারটিই তাকে সূযোগ করে দেয় ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ডক্টর হুসসামের তবে তার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এসেছে এই আর্সেনিক ফিল্টার আবিষ্কারের পর।
আবুল হুসসামের জন্ম ১৯৫২ সালে কুষ্টিয়াতে। তিনি বড় হয়েছেন সেখানেই এবং তার প্রাথমিক পড়াশুনাও কুষ্টিয়াতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ১৯৮৬ সালে পেনিসেলভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ পিটস্‌বার্গ থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ইউনিভার্সিটি অফ মিনিসোটার রসায়ন বিভাগ থেকে পোষ্ট-ডক্টরাল ট্রেনিং সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি কাজ করছেন জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও প্রাণরসায়ন বিভাগে। এছাড়া তিনি রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেস ওয়েষ্টার্ন রিসার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডক্টর হুসসাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আনাডারগ্রাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট লেভেলে পড়ান কোয়ান্টিটেটিভ কেমিক্যাল এনালাইসিস, ইন্সট্রুমেন্টাল এনালাইসিস, ইলেক্ট্রো-এনালাইটিক্যাল কেমিষ্ট্রি এবং থিওরি অফ এনালাইটিক্যাল প্রসেস বিষয়ে। তিনি গবেষণা করেছেন ইলেক্ট্রো-এনালাইটিকাল কেমিষ্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল কেমিষ্ট্রি ও অর্গানাইজড মিডিয়া কেমিষ্ট্রি নিয়ে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব (রেজাউল করিম)
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বে চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। তার এ নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনের ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় যে মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ওষুধ উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল অনকোলজির পিএইচডি গবেষক রেজাউল করিম এ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। তার এ তত্ত্বসংক্রান্ত গবেষণাপত্র আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চ জার্নাল অক্টোবর ’০৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
রেজাউল করিম গাইবাìধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আব্দুস সালাম সরকার ও রাবেয়া বেগমের বড় ছেলে।
Oparin Theory Neo-Darwinism, Lamarck Theory –র ভুল প্রমাণ (ড. মো. আব্দুল আহাদ)
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আহাদ আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণালদ্ধ তথ্য দ্বারা তিনি জীববিজ্ঞানের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর থিওরী যথা, Oparin Theory (প্রথম এককোষী জীবের উৎপত্তি প্রসঙ্গে রাশিয়া ও ব্রিটেন বিজ্ঞানীর থিওরী), Neo-Darwinism, Lamarck Theory (সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের উৎপত্তি বা বিবর্তন প্রসঙ্গে থিওরী) ভুল প্রমাণ করেছেন। তার গবেষণা প্রবন্ধ দুটি ভারত থেকে প্রকাশিত The International Journal of Bio-Resource and Stress management এ যথাক্রমে মার্চ ও জুন, ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ও ভারত এর বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আহাদের পিতা মরহুম আব্দুল খালেক সরদার। তার বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামে। উনার বিদ্যালয় জীবন কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। কলেজ জীবন সাতক্ষীরাতে কাটানোর পরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তোর শিক্ষা গ্রহন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহতে।
ডঃ আতাউল করিম
ট্রেন চলবে কিন্তু ট্রেনের চাকা লাইন বা ট্রাক স্পর্শ করবে না। চুম্বকের সাহায্যে এটি এগিয়ে চলবে এবং গন্তব্যে পৌঁছবে চোখের পলকে। বিশ্বের পরিবহন সেক্টরে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবং বাস্তব এটি। আর এর পুরো কৃতিত্ব একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। তিনি হলেন ডঃ আতাউল করিম। বিশ্বের সেরা ১০০জন বিজ্ঞানীর একজন।
মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে তিনি বর্তমানেযুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের মেধাসম্পন্ন ৫০০০ গবেষক-ছাত্রেরনেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্ততঃ ৬০০ ফ্যাকাল্টিতে। ডঃ করিমের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে ৬টি কলেজ, কমপক্ষে ২০টি গবেষণাকেন্দ্র, ৬শত শিক্ষক এবং ৫হাজারের উপরে গ্রাজুয়েট ও আন্ডার-গ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রী।
অধ্যাপক ওসমান গণি তালুকদার এবং অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ
কিছুদিন পর বিভিন্ন পত্রিকাতে যে খবরটি বেশি আলোড়িত হয় তা হলো বাংলাদেশ এর দুই বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতাকে পরিপূর্ণ রুপ দিবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ।ওই বিজ্ঞানীদ্বয় হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওসমান গণি তালুকদার এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অপর অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ।২০ বছর ধরে গবেষণা করে তাঁরা এ সাফল্য পেয়েছেন।এ থেকেই বুঝা যায় যে তাঁরা এই আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর অনেক গবেষণা করেছেন ।বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতবাদ অনুসারে কোন বস্তুর গতি আলোর চেয়ে বেশি হতে পারে না।এ বিষয়ে আইনস্টাইন দিয়ে গেছেন পাঁচটি সমীকরণ এবং একটি মৌলিক ধ্রুবসংখ্যা।আইনস্টাইনের এ মতবাদ ছিল অসম্পূর্ণ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে তাঁরা নানাভাবে প্রমাণ পেয়েছেন যে, বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে। বস্তুর গতি যে আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ ওসহকারে ২০০১ সালে ওসমান গণি তালুকদার An Alternative Approach to the Relativity নামে একটি বইও প্রকাশ করেন।

আব্দুস সাত্তার খান
১৯৪১ – ৩১শে জানুয়ারি, ২০০৮ বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহাকাশ গবেষক। কর্মজীবনে তিনি নাসা, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের প্র্যাট এন্ড হুইটনি এবং অ্যালস্টমে (সুইজারল্যান্ড) কাজ করেছেন
আব্দুস সাত্তারের গবেষণা এবং মহাকাশে তার প্রয়োগের জন্য তিনি নাসা, আমেরিকান বিমানবাহিনী, ইউনাইটেড টেকনোলজি এবং অ্যালস্টম থেকে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির একজন পেশাদার রসায়নবিদ এবং নির্বাচিত ফেলো
ড. আবেদ চৌধুরী।
বর্তমান সময়ে তার যুগান্তকারী একটি উদ্ভাবন হলো সোনালী মিনিকেট চাল। যে চাল খেলে রক্তে শর্করা এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর।
হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ নামে নতুন ওষুধের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশি দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী এরই মধ্যে কিউবাতে শুরু হয়েছে তাদের উদ্ভাবিত নতুন এই ওষুধ।
ড. রুবাব খান
সূর্যের চেয়ে কয়েকশ গুণ বড় পাঁচটি জোড়া নক্ষত্র আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিদ্যার জগৎ কাঁপিয়ে দিয়েছে নাসার একটি বিশেষ দল। আর এই দলের নেতৃত্বে আছেন নাসায় কর্মরত তরুণ বাংলাদেশি গবেষক ড. রুবাব খান (২৯)।

যুক্তরাষ্ট্রেই উচ্চতর পড়াশোনা সম্পন্ন করে ড. রুবাব খান কাজ শুরু করেন নাসায়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইটের একদল গবেষক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. তাহের এ সাইফ
জীবন্ত রোবট' উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দারুণভাবে আলোচিত হয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. তাহের এ সাইফ। তাঁর উদ্ভাবিত ‘জীবন্ত রোবট' নতুন বছরের সেরা আবিষ্কার বলে অভিহিত করেছেন সবাই। জীবন্ত রোবটের মাধ্যমে মরণঘাতী ক্যানসার জয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে কেন?


                      Image may contain: food
রান্না করার সময় অথবা ডিম ভাজার জন্য আপনি একটা পেঁয়াজ কাটতে গেলেন, আর তখন পেঁয়াজের ঝাঁঝের কারণে আপনার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়া শুরু করল! কি ঝামেলার ব্যাপার! কিন্তু এই পেঁয়াজ কাটার সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ার সম্পর্ক কোথায়? কেনই বা এমন ঘটে? মাথায় কি প্রশ্নটা আসেনা?

পেঁয়াজে সালফারযুক্ত বিভিন্ন ধরণের যৌগ থাকে, এর মধ্যে একটি হল অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড (amino acid sulfoxide)পেঁয়াজ কাটলে এর কোষের ভেতরের অ্যালিনেজ (allinase) নামক এনজাইম বের হয়ে আসে, যা amino acid sulfoxides যৌগগুলোকে উদ্বায়ী সালফোনিক এসিড (sulfenic acid) এ পরিণত করে; যা চোখের পানির সংস্পর্শে আসামাত্র syn-propanethial-S-oxide নামক যৌগ তৈরী করে, এটিই চোখে পানি আনার জন্য দায়ী। সহজ কথায়, চোখের পানির সংস্পর্শে মৃদু সালফিউরিক এসিড তৈরী হয়, তাই চোখ জ্বালাপোড়া করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, জ্বালাপোড়া এর অনুভূতি কর্ণিয়ার উপরে থাকা free nerve ending (যেখানে অনেকগুলো স্নায়ু একত্রে এসে মিলিত হয়) এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক সনাক্ত করে থাকে, তারপর সিলিয়ারি নার্ভ (cilliary nerve) দিয়ে এই অনুভূতি বাহিত হয়ে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ (parasympathetic nerves) হয়ে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড (lacrimal gland)-কে উত্তেজিত করে। ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

এখন এ থেকে বাঁচার উপায় কি?

এই পেঁয়াজকে যদি আপনি ফ্রিজে রাখেন অথবা কাঁটার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, তাহলে পেঁয়াজ কাঁটার সময় আপনার চোখ জ্বালাপোড়া করবেনা এবং এর ফলে চোখ দিয়ে পানিও পড়বেনা। কি মজা তাই না? চেষ্টা করেই দেখুন..

এর কারণ হচ্ছে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানির সংস্পর্শ পেয়ে সালফোনিক এসিড তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। একই ঘটনা ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রেও হয়। তখন ঠাণ্ডার কারণে সালফোনিক এসিডের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। ফলে সেটি চোখের পানির সংস্পর্শে এসে syn-propanethial-S-oxide যৌগ তৈরী করতে পারেনা। এ কারণে চোখে জ্বালাপোড়াও করেনা।

মধু কেন মিষ্টি হয়?

Natore Bazar - Ghore Bose Barir Bazar



একদা রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৌমাছিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি ভাবে মধু তৈরী কর? মৌমাছি বিনয়ের স্বরে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আমি বাগানে গিয়ে হাজার রকমের ফুলের রস চুষে নেই। পেটের ভিতর একত্রিত ও মিশ্রিত করে বের করলে তা মধুতে পরিণত হয়। 

রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অনেক ফুলের রস তো টক ও তিক্ত। কিন্তু সব মধু মিষ্টি হয় কেন?

মৌমাছি উত্তরে বললো,

"গুপত চুঁ খানীমে বর আহমদ দরুদ,

মী শুওয়াদ শীরীনে ওয়া তালখী রারে বৌদ।"

অর্থ্যাৎঃ- আমাকে আল্লাহ তায়ালা কুদরতীভাবে শিক্ষা দিয়েছে যে, বাগান থেকে ফুলের রশ নিয়ে বাসায় আসার সময় যেন আপনার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করি। আর ঐ দরুদ শরীফের বরকতেই মধু মিষ্টি হয় এবং এ মধু সকল রোগের শেফা হয়।

[মসনবী শরীফ- মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি রহমাতুল্লাহি আলাইহি]

ওল বা কচু খেলে গলা চুলকায় কেন এবং তেঁতুল খেলে সেই চুলকানি চলে যায় কেন?


  কচু শাক হৃদরোগ-ডায়াবেটিসসহ যেসব ...

            
কচু ও ওল জাতীয় পদার্থের কান্ডে, মূলে ও পাতায় একটি বিশেষ যৌগ থাকে, ক্যালসিয়াম অক্সালেট [Ca(COO)2]এর কেলাসের গঠন কিছুটা সূঁচাকৃতির বা তারকাকৃতির বা গোলাকার হতে পারে। সব কচুতে একই রকম থাকে না। যেসব কচু তে সূঁচাকৃতির বা গোলাকার কেলাসিত ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে তারা গলায় আটকে যায় এবং তার জন্য গলা চুলকাতে থাকে। মজার ব্যাপার, ক্যালসিয়াম অক্সালেট হচ্ছে ক্ষারীয়। আর তেঁতুলে থাকে টারটারিক এসিড ও লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিড। তাই এসব খাওয়ার পর এসিডের সাথে ক্ষারের প্রশমন বিক্রিয়া ঘটে এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট প্রশমিত হয়ে যায়।তাই, কচু খেয়ে গলা চুলকালে তেঁতুল/লেবু বা টকজাতীয় কিছু খেতে হয়, তাহলে চুলকানি চলে যায়।

ওল' অন্ত্যন্ত পুষ্টিকর সব্জী | ask2Q ...
                

Saturday, September 1, 2018

মানবদেহ-রক্ত সংবহন তন্ত্র।



প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুই ভালোমত বুঝে মনে রাখতে হবে। অধ্যায়টি উপভোগ্যও বটে।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. রক্ত আন্তঃকোষীয় তরল যোজক কলা। (অন্তঃকোষীয় বলতে বোঝায় একটা কোষের মধ্যেই, আর আন্তঃকোষীয় বলতে একাধিক কোষের মধ্যে সম্পর্ক) (রক্তে ক্ষেত্রে যোজক কলা কথাটা একটু কনফিউজিং লাগতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন কোষের মধ্যে খাদ্য, অক্সিজেন, হরমোন, ইত্যাদির আদান প্রদানের মাধ্যম হল রক্ত, তাই রক্ত এক ধরনের যোজক কলা)

২. রক্ত সামান্য ক্ষারীয়, এর pH গড়ে ৭.২-৭.৪ । ( pH বেশি হওয়ার মানে H+ কম হওয়া)

৩. আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৬৫, পানির চেয়ে সামান্য বেশি। (যেহেতু রক্তে পানি বা তরল ছাড়াও বেশ কিছু কোষ থাকে)

৪. সুস্থ মানুষের দেহে রক্ত থাকে প্রায় ৫-৬ লিটার।

৫. রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে প্লাজমা বলে। (রক্ত দেখতে লাল, কারণ লোহিত কণিকার উপস্থিতির জন্য একে লাল দেখায়, কিন্তু কোন ভাবে লোহিত কণিকা সরানো হলে বাকি যে তরল অংশ পাওয়া যায়, তা দেখতে হলুদ)

৬. রক্তের প্লাজমায় পানির পরিমাণ ৯০-৯২%, এবং দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমাণ ৮-১০%। এর মধ্যে ৭.১-৮.১% জৈব এবং অজৈব উপাদান প্রায় ০.৯%।

৭. রক্তরসের বিভিন্ন কাজ:
  • খাদ্যসার (গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, লিপিড, লবণ, ভিটামিন) বিভিন্ন কোষে বয়ে নিয়ে যাওয়া।
  • কলা থেকে বর্জ্য পদার্থ রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যাওয়া।
  • অধিকাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তরসে বাইকার্বনেট রূপে দ্রবীভূত থাকে। (লক্ষ করা প্রয়োজন, রক্তরসের কাজ অক্সিজেন পরিবহন নয়, যা লোহিত কণিকার কাজ)
  • হরমোন, এনজাইম পরিবহন।
  • রক্তের অম্ল ক্ষারকের ভারসাম্য রক্ষা করে, pH যাতে একই থাকে।

৮. তিন রকমের রক্ত কণিকা আছে:
  • এরিথ্রোসাইট বা লোহিতকণিকা (এরিথ্রো মানে লাল)
  • লিউকোসাইট বা শ্বেতরক্তকণিকা (লিউকোপ্লাস্ট-এর মত বর্ণহীন বোঝাতে)
  • থ্রম্বোসাইট বা অণুচক্রিকা (থ্রম্বোসিস বা রক্ত তঞ্চন করে)

৯. লোহিত রক্ত কণিকা দ্বিঅবতল এবং নিউক্লিয়াসবিহীন। (একটা ফুটবলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, ফুটবলের পাম্প বেরিয়ে গেলে যেমন চুপসে যায়, দুই দিকের তলই নিচে নেমে যায়, লোহিত কণিকা তেমনি প্রথমে গোল থাকলেও নিউক্লিয়াস না থাকার ফলে চুপসে দ্বিঅবতল অবস্থায় চলে যায়)

১০. লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্চক কণিকা থাকে, যার ফলে কোষটিকে লাল দেখায়। হিমোগ্লোবিন ক্ষুদ্রতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি (যেমন বেগুনি, নীল) শোষণ করে, কিন্তু দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের লাল আলো শোষণ করে না প্রতিফলিত করে, তাই একে লাল দেখায়।

১১. ভ্রূণদেহে প্রতি ঘনমিমি তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে (৮০-৯০ লক্ষ) এবং পূর্ণবয়ষ্ক নারী দেহে সবচেয়ে কম থাকে (৪৫ লক্ষ)।

১২. প্রতি ঘন মিমি রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা প্রায় ৩৭.৫ লক্ষের চেয়ে কমে গেলে ওই অবস্থাকে রক্তস্বল্পতা (এনেমিয়া=এন+এমিয়া) বলে। আর ৬৫ লক্ষের চেয়েও বেড়ে গেলে এ অবস্থাকে বলে পলিসাইথেমিয়া। (পলি বলতেই বেশি কিছু বোঝায়)

১৩. ভ্রূণে লোহিত কণিকা যকৃত, প্লীহা (Spleen, পাকস্থলীর পিছনে থাকা একটি অঙ্গ) ও থাইমাস (গলার কাছের একটি গ্রন্থি) থেকে সৃষ্টি হয়। জন্মের পর ২০ বছর পর্যন্ত মানবদেহে পায়ের লম্বা অস্থি ফিমারের অস্থিমজ্জা থেকে এবং জীবনের বাকি সময় অন্যান্য অস্থিমজ্জা থেকেও উৎপন্ন হতে থাকে।

১৪. লোহিত কণিকার গড় আয়ু ৪ মাস বা প্রায় ১২০ দিন। (এজন্যই চার মাস পরপর রক্ত দেওয়ার কথা বলা হয়)

১৫. লোহিত কণিকা শরীরের সবখানে অক্সিজেন পরিবহন করে।

১৬. শ্বেতরক্তকণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত, আকারে বড়, আকৃতি পরিবর্তনশীল।

১৭. প্রতি ঘনমিমি রক্তে ৫-৮ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার অনুপাত ৭০০:১

১৮. শ্বেতরক্তকণিকাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়:
  • গ্র্যানিউলোসাইট (গ্র্যানিউল বিশিষ্ট বা দানাদার কোষ)
  • অ্যাগ্র্যানিউলোসাইট (গ্র্যানিউলহীন বা দানাহীন কোষ)

১৯. গ্র্যানিউলোসাইট তিন প্রকার। যথা:
  • নিউট্রোফিল (বর্ণ নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ, এসিডিক/অম্লীয় বা বেসিক/ক্ষারকীয় না)
  • ইওসিনোফিল (ইওসিন রঞ্জকে লাল রং ধারণ করে, একে এসিডোফিলিকও বলা চলে)
  • বেসোফিল (বেস বা ক্ষারকে নীল বর্ণ ধারণ করে)

২০. গ্র্যানিউলোসাইটের কাজ:
  • নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ভক্ষণ করে
  • ইওসিনোফিল ও বেসোফিল নিঃসৃত হিস্টামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • বেসোফিল নিঃসৃত হেপারিন ধমনী বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়

২১. অ্যাগ্র্যানিউলোসাইট দু’প্রকার। যথা:
  • লিম্ফোসাইট
  • মনোসাইট

২২. অ্যাগ্র্যানিউলোসাইটের কাজ:
  • লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং ফাইব্রোব্লাস্ট সৃষ্টি করে কলা বা টিস্যুর ক্ষয়পূরণ করে
  • মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগ জীবণূ ধ্বংস করে (নিউট্রোফিলের মত কাজ, তবে ভিন্ন ভাবে)
  • উভয়ের প্লাজমা প্রোটিন থেকে ট্রিফোন নামক কলাকোষের পুষ্টিকারক পদার্থ উৎপন্ন হয়।

২৩. থ্রম্বোসাইট বা অণুচক্রিকা ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা, নিউক্লিয়াসবিহীন।

২৪. প্রতি ঘনমিমি রক্তে থ্রম্বোসাইটের সংখ্যঅ আড়াই লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ। অসুস্থ দেহে আরও বেড়ে যায়।

২৫. থ্রম্বোসাইটের গড় আয়ু প্রায় ৫-১০ দিন।

২৬. থ্রম্বোসাইটের কাজ:
  • রক্ত তঞ্চন বা জমাট বাঁধায় অংশ নেয়
  • রক্তজালিকার ক্ষতিগ্রস্ত এপিথেলিয়াল আবরণ পুর্নগঠন অংশ নেয়
  • রক্তবাহিকার সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে

২৭. একটি তুলনা:
তুলনীয় বিষয়
এরিথ্রোসাইট
লিউকোসাইট
থ্রম্বোসাইট
সংখ্যা প্রতি ঘনমিমি রক্তে
প্রায় ৫০ লক্ষ
৫-৮ হাজার
২.৫-৫ লক্ষ
নিউক্লিয়াস
থাকে না
থাকে
থাকে না
বর্ণ
লাল
বর্ণহীন
বর্ণহীন
আয়ু
১২০ দিন
অজানা
৫-৯ দিন
আকৃতি
দ্বি-অবতল
গোলাকার বা অনিয়ত
অনিয়ত
প্রধান কাজ
অক্সিজেন পরিবহন
রোগ প্রতিরোধ
রক্ত জমাট বাঁধা

২৮. রক্তের কাজ:
  • অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন
  • খাদ্যসার, হরমোন, সঞ্চিত খাদ্য পরিবহন
  • জীবাণু প্রতিরোধ
  • রক্তপাত প্রতিরোধ
  • দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ
  • ক্ষত নিরাময়

২৯. রক্ত তঞ্চন পদ্ধতিতে ১৩ টি ফ্যাক্টর কাজ করে।

৩০. থ্রম্বোপ্লাস্টিন ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রো-থ্রম্বিন কে সক্রিয় থ্রম্বিন-এ পরিণত করে। এবং থ্রম্বিন ফাইব্রোজেন হতে ফাইব্রিন তৈরি করে। ফাইব্রিন জালকে রক্ত কোষ আটকে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

ক্রম: থ্রম্বোপ্লাস্টিন > ক্যালসিয়াম আয়ন + নিষ্ক্রিয় প্রো-থ্রম্বিন > থ্রম্বিন + ফাইব্রিনোজেন > ফাইব্রিন জালক > রক্ত তঞ্চন

৩১. শিরার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৫% এবং ধমনীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ২০% ।

৩২. কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত হয়।

৩৩. কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার রক্তকণিকায় কিছু অ্যান্টিজেন (A, B এবং O)-এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে রক্তের যে শ্রেণীবিন্যাস করেন, তা ABO ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।

৩৪. অ্যান্টিবডি জেনারেটর থেকে “অ্যান্টিজেন” শব্দের উৎপত্তি। অ্যান্টিবডি হল বাহির থেকে আসা অচেনা পদার্থের (অ্যান্টিজেনের) প্রতি সাড়া দিয়ে প্লাজমা B কোষ হতে উৎপন্ন প্রোটিনধর্মী পদার্থ, যা অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে একে নিষ্ক্রিয় ও ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

৩৫. যে অ্যান্টিবডির সঙ্গে অ্যান্টিজেনের বিক্রিয়ায় রক্তকণিকা জমাট বেঁধে যায়, তাকে অ্যাগ্লুটিনিন বলে।

৩৬. মানুষের রক্তে A B – এই দু’রকম অ্যান্টিজেন হতে পারে। কারো রক্তে A অ্যান্টিজেন থাকে কিন্তু B অ্যান্টিজেন থাকে না। তাই B অ্যান্টিজেন দেখলে বাইরের কোন প্রোটিন ভেবে এর বিরূদ্ধে অ্যান্টিবডি β (Anti-B) তৈরি করে। আবার কারও রক্তে B অ্যান্টিজেন থাকে, কিন্তু A অ্যান্টিজেন থাকে না। সেভাবে α (Anti-A) তৈরি করে।

৩৭. কারও রক্তে উভয় অ্যান্টিজেন থাকে, তাদের ব্লাড গ্রুপ AB, তাদের কোন অ্যান্টিবডি থাকে না, তাই A বা B গ্রুপের রক্ত এরা গ্রহণ করতে পারে, তাই এদের বলে সার্বজনীন গ্রহীতা।

৩৮. কারও কোনও অ্যান্টিজেন-ই থাকে না, তাদের ব্লাড গ্রুপ O, তারা A B উভয় অ্যান্টিজেনের প্রতিই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তবে O গ্রুপের রক্ত যে কাউকেই দেওয়া যায়, যেহেতু তাদের রক্তে A বা B কোন অ্যান্টিজেনই উপস্থিত থাকে না। তাই এদের সার্বজনীন দাতা বলে।

৩৯. রক্ত সঞ্চারণের সময় ব্লাড গ্রুপ ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। আপদকালীন সঞ্চারণকালে O গ্রুপের এবং Rh নেগেটিভ রক্ত সঞ্চারণ করা নিরাপদ।

৪০. ১৯৪০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার এবং উইনার মানুষের লোহিত কণিকার ঝিল্লীতে Rh ফ্যাক্টর আবিষ্কার করেন। কারও কারও রক্তে এই Rh ফ্যাক্টর থাকে না, এবং বাইরে থাকা আসা রক্তে Rh ফ্যাক্টর থাকলে এর বিরূদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ও রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

৪১. ইংল্যান্ড, আমেরিকার প্রভৃতি দেশের মানুষদের মধ্যে ৮৫% মানুষের Rh ফ্যাক্টর থাকে, এবং এশিয়া ও আফ্রিকায় ৯৫% মানুষের দেহে এই ফ্যাক্টর থাকে।

৪২. Rh ফ্যাক্টর ৬টি সাধারণ অ্যান্টিজেনের সমষ্টিবিশেষ, এদের ৩ জোড়ায় ভাগ করা যায়: যথা: C,c এবং D,d এবং E,e মানুষের দেহে এই ৩ জোড়ার প্রত্যেকটির একটি করে থাকে। যে রক্তে C,D,E (মেন্ডেলিয় প্রকট অ্যান্টিজেন)থাকে, সে রক্তকে Rh+ রক্ত বলে। প্রত্যেক Rh+ রক্তে D থাকতে বাধ্য। আর যে রক্তে c,d,e (মেন্ডেলিয় প্রচ্ছন্ন অ্যান্টিজেন) থাকে।

৪৩. একজন Rh নেগেটিভ মহিলার সঙ্গে Rh পজিটিভ পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তান হবে Rh পজিটিভ, কারণ Rh একটি প্রকট বৈশিষ্ট্য। শিশু যখন মায়ের দেহে থাকবে, তখনই শিশুর দেহে সৃষ্ট Rh ফ্যাক্টরের বিরূদ্ধে মায়ের দেহে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়। প্রথম সন্তান জীবিত থাকলেও দেহে প্রচণ্ড রক্তস্বল্পতা ও জন্মের পর জন্ডিস দেখা যায়। এ অবস্থাকে এরিথ্রো-ব্লাস্টোসিস ফিটালিস (এরিথ্রো=লোহিত কণিকা, ব্লাস্টোসিস=যেহেতু Rh ফ্যাক্টরের অ্যান্টিবডি রক্তকে জমাট বেঁধে দেয়, ফিটালিস=ফিটাস অবস্থার কথা বোঝানো হয়) বলে।

৪৪. Rh নেগেটিভ রক্ত দুর্লভ। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ১৫% মানুষের এমন রক্ত রয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী পাহাড় অঞ্চল পাইরেনীজ-এর বাস্ক-এ সবচেয়ে বেশি এমন রক্ত পাওয়া যায়, ২৫-৩৫%। এছাড়াও আফ্রিকার বার্বার ও সাইনাই উপদ্বীপের বেদুঈন-এও এমন রক্ত বেশি পাওয়া যায়, ১৮-৩০%। এশিয়াতে অনেক কম, প্রায় ৫%।

৪৫. মানুষের রক্ত সংবহন তন্ত্র পাঁচটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা:
  • রক্ত
  • হৃদপিণ্ড
  • ধমনী
  • শিরা
  • কৈশিক জালিকা

৪৬. হৃদপিণ্ড রক্ত পরিশুদ্ধ করে না, এটি একটি পাম্প যন্ত্র যা অক্সিজেন কম থাকা রক্তকে অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ফুসফুসে প্রেরণ করে এবং অক্সিজেন যুক্ত রক্ত ফুসফুস থেকে হৃদপিণ্ডে আসার পর সারা দেহে ছড়িয়ে দেবার জন্য পাম্প করে।

৪৭. একজন সুস্থ মানুষের হৃদপিণ্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়, প্রতিটি নিলয় হতে ১৫৫ লিটার রক্ত বের করে দেয়।

৪৮. পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষের হৃদপিণ্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম এবং মহিলার হৃদপিণ্ডের ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম।

৪৯. হৃদপিণ্ড দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা ঝিল্লী দ্বারা আবৃত। এর বাইরের স্তর “প্যারাইটাল পেরিকার্ডিয়াম” (যার অর্থ দেয়াল, করোটির একটি অস্থির নাম) এবং ভেতরের স্তর “ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়াম”।

৫০. হৃদপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত, ডান দিকে উপরে ডান অলিন্দ, নিচে ডান নিলয়, বাম দিকে উপরে বাম অলিন্দ এবং নিচে বাম নিলয়। (বই-এর চিত্র কনফিউজিং লাগতে পারে, কিন্তু সবসময় মনে রাখা উচিৎ, যে মানুষটির হৃদপিণ্ড দেখছি, ঐ মানুষটির ডান দিক আমাদের দিক থেকে বাম দিক এবং ঐ মানুষটির বাম দিক আমাদের জন্য ডান দিক, এজন্য আমাদের জন্য যে দিক বাম দিক, সেদিকে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে, যা ঐ ব্যক্তির সাপেক্ষে ডান দিক, এবং অনুরূপ ভাবে আমাদের জন্য ডান দিকে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে, যা ঐ মানুষটির সাপেক্ষে বাম দিক)

৫১. ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা থাকে এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে বাইকাসপিড কপাটিকা থাকে। (বাম=ব=বাইকাসিপিড, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)

৫২. ডান নিলয় থেকে পালমোনারী বা ফুসফুসীয় ধমনীর ছিদ্রপথে এবং বাম নিলয় থেকে সৃষ্ট অ্যাওর্টা বা মহাধমনীর মুখের কপাটিকা দু’টি অর্ধ চন্দ্রাকার বা সেমিলুনার।


৫৩. হৃদপিণ্ড প্রাচীর তিনটি পৃথক স্তরে গঠিত; যথা:
  • এপিকার্ডিয়াম (বাইরের স্তর)
  • মায়োকার্ডিয়াম
  • এন্ডোকার্ডিয়াম (ভেতরের স্তর)
৫৪. মায়োকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডের সংকোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

৫৫. হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো এন্ডোকার্ডিয়ামে গঠিত (যেহেুতু ভেতরের স্তর)

৫৬. হৃদপিণ্ড সাধারণ অবস্থায় মিনিটে ৭০-৮০ বার হৃদস্পন্দন দেয়। সংকোচন কে বলে সিস্টোল ওবং প্রসারণকে বলে ডায়াস্টোল (সংকোচন=স=সিস্টোল, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)

৫৭. রক্তের গতিপথ:
  • প্রথমে সারা দেহ থেকে অক্সিজেন কম থাকার রক্ত মহাধমনী দিয়ে ডান অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর ডান নিলয়ে যায়, এরপর পালমোনারী বা ফুসফুসীয় ধমনী দিয়ে ফুসফুসে যায়, সেখানে রক্তে অক্সিজেন যুক্ত হয়।
  • এরপর অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে পালমোনারী বা ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, পরে বাম নিলয়ে যায়, এরপর মহাধমনী দিয়ে সারা দেহে যায় ও কৈশিক জালিকায় গিয়ে শেষ হয়।
(অলিন্দের সাথে যুক্ত রক্তনালিকা শিরা, আর নিলয়ের সাথে সংযুক্ত রক্তনালিকা ধমনী)

৫৮. হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৭০-৮০ বার বা গড়ে ৭৫ বার, এভাবে হিসেবে করলে প্রতিটি হৃদস্পন্দনের স্থায়িত্ব ০.৮ সেকেন্ড।


৫৯. কার্ডিয়াক চক্র:
  • অলিন্দের ডায়াস্টোল = ০.৭ সেকেন্ড
  • অলিন্দের সিস্টোল = ০.১ সেকেন্ড
  • নিলয়ের সিস্টোল = ০.৩ সেকেন্ড
  • নিলয়ের ডায়াস্টোল = ০.৫ সেকেন্ড

৬০. ধমনী হচ্ছে নিলয় হতে সৃষ্ট এবং কৈশিক জালিকায় গিয়ে শেষ হওয়া রক্ত নালিকা যা অধিকাংশ সময় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে, (পালমোনারী ধমনী ব্যতিক্রম)। অন্য দিকে শিরা কৈশিক জালিকা থেকে সৃষ্টি হয়ে অলিন্দে এসে যুক্ত হয় যা বেশির ভাগ অক্সিজেন কম থাকা রক্ত বহন করে, (পালমোনারী শিরা ব্যতিক্রম)।

৬১. ধমনী প্রাচীর তিন স্তর বিশিষ্ট, যথা:
  • টিউনিকা এক্সটার্না – বাইরের স্তর – যোজক কলায় গঠিত
  • টিউনিকা মিডিয়া – মাঝের স্তর – পেশীতন্তু নির্মিত
  • টিউনিকা ইন্টিমা – ভেতরের স্তর – এন্ডোথেলিয়ালে গঠিত

৬২. শিরার প্রাচীর সংখ্যাও ৩, কিন্তু তা স্থিতিস্থাপক নয়।

৬৩. কৈশিক জালিকা : শুধুমাত্র একস্তর বিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়ালে গঠিত খুবই সূক্ষ্ম রক্ত বাহিকা, যেখানে সহজে অক্সিজেন কোষে প্রবেশ করতে পারে, ও কোষ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড কৈশিক জালিকায় প্রবেশ করতে পারে।

৬৪. ধমনী ও শিরার পার্থক্য:
তুলনীয় বিষয়
ধমনী
শিরা
উৎপত্তিস্থল
হৃদপিন্ডের নিলয়
কৈশিক জালিকা
সমাপ্তিস্থল
কৈশিক জালিকা
হৃদপিণ্ডের অলিন্দ
গহরের ব্যাস
ছোট
অপেক্ষাকৃত বড়
কপাটিকা
নেই
আছে (যেহেুতু বড়, তাই কপাটিকা আছে)
স্থিতিস্থাপকতা
আছে
নেই

৬৫. মানবদেহে প্রধানত দু’ধরনের রক্তসংবহন চক্র রয়েছে। যথা:
  • সিস্টেমিক সংবহন চক্র: দেহ থেকে অক্সিজেন কম থাকা রক্ত হৃদপিণ্ডে আসে ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে আবার দেহে রক্ত পৌছায়।
  • পালমোনারী সংবহন চক্র: হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন কম থাকা রক্ত ফুসফুসে নিয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ করে আবার হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে (পরে তা হৃদপিণ্ড সিস্টেমিক সংবহনের মাধ্যমে সারা দেহে পাঠায়)।

৬৬. পোর্টাল তন্ত্র: প্রধান দু’টো সংবহন চক্র ছাড়ায় রক্ত কিছুটা পার্শ্বপথ অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে শিরা হৃদপিণ্ডে না গিয়ে মাধ্যমিক অঙ্গে প্রবেশ করে সেখানে আবার কৈশিক জালিকায় বিভক্ত হয়ে আবার শিরা গঠন করে। এরপর রক্ত হৃদপিণ্ডে পৌছায়। প্রধানত দু’ধরনের পোর্টাল তন্ত্র রয়েছে:
  • হেপাটিক: যকৃতে ঘটে
  • রেনাল: বৃক্কে ঘটে

৬৭. হৃদপিণ্ডের হৃদপেশীতে রক্ত সঞ্চালনকারী সংবহনকে করোনারী রক্ত সংবহন বলে।

৬৮. রক্ত প্রবাহের সময় ধমনীর প্রাচীরে প্রবাহের দিকের সাথে লম্বভাবে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হয়, একে রক্ত চাপ বলে।

৬৯. সুস্থ প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষে সিস্টোলিক চাপ প্রায় ১২০ মিমি পারদ স্তম্ভের সমান। ডায়াস্টোলিক চাপ প্রায় ৮০ মিমি পারদ স্তম্ভ।

৭০. কোন ব্যক্তির রক্তচাপ সিস্টোলিক অবস্থায় ১৬০ মিমি পারদস্তম্ভ বা এর চেয়ে বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক অবস্থায় ৯৫ মিমি পারদস্তম্ভের বা এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।

৭১. কৈশিক জালিকার প্রাচীর ভেদ করে রক্তের কিছু উপাদান কোষের চারপাশে অবস্থান করে যাদের “কলারস” বলা হয়। কলারসে লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা, প্লাজমা প্রোটিন থাকে, সাধারণত শ্বেতকণিকা থাকে। এই কলারস কৈষিক জালিকা ছাড়াও আর এক ধরনের বদ্ধ নালী দ্বারা গৃহীত ও পরিবাহিত হয়ে পুনরায় রক্তে ফিরে আসে। এই নালীগুলোকে লসিকা নালী বলে এবং বহনকারী স্বচ্ছ কলারসকে লসিকা বলে।

৭২. লসিকার আপেক্ষিক গুরুত্ব = ১.০১৫১ (রক্তের ক্ষেত্রে ১.০৬৫)

৭৩. লসিকা নালীর ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে লসিকা গ্রন্থি যা বিভিন্ন জীবাণু ও ক্ষতিকর কোষের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।

৭৪. লসিকানালী হতে প্রতিদিন প্রায় ১২০০-২২৮০ মিমি লসিকা নির্গত হয়।

৭৫. প্লাজমা, লসিকা ও সিরাম-এর মধ্যে পার্থক্য:
তুলনীয় বিষয়
প্লাজমা
লসিকা
সিরাম
প্রকৃতি
রক্তের জলীয় অংশ
কৈশিক জালিকা থেকে চু্ঁইয়ে পড়া স্বচ্ছ কোষরস
রক্ত জমাট বাঁধার পর বা রক্ত তঞ্চনের পর তঞ্চিত পদার্থ নিঃসৃত জলীয় অংশ
রক্তকণিকার উপস্থিতি
লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা
প্রধানত শ্বেতরক্তকণিকা
কোন রক্ত কণিকাই থাকে না।
ফাইব্রিনোজেনের উপস্থিতি
বিপুল পরিমাণে
সামান্য পরিমাণে
অনুপস্থিত
অবস্থান
প্রধান রক্ত বাহিকায় ও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে
কোষের মাঝে থাকা ফাঁকা স্থান বা কোষান্তরে
সাধারণ অবস্থায় দেহের মধ্যে থাকে না




 

Blogger news

Blogroll

About