একটি টেস্ট-টিউবে নাইট্রিক অ্যাসিড কিংবা নাইট্রেট লবণের জলীয় দ্রবণ নিয়ে ওর সঙ্গে সদ্যপ্রস্তুত FeSO4 দ্রবণ যোগ করা হল । এইবার টেস্ট-টিউবের গা-বেয়ে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] ধীরে ধীরে দ্রবণের সঙ্গে যোগ করা হল । গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] ভারী বলে তলায় চলে যায় এবং নীচের স্তর গঠন করে । এর ওপরে দ্রবণের স্তর থাকে । এই
দুই তরলের সংযোগস্থলে একটা বাদামী বলয় গঠিত হয় । এই পরীক্ষাকে বলয় পরীক্ষা
[Ring Test] বলা হয় । নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] এবং নাইট্রেট লবণের শনাক্তকরণে এই পরীক্ষা
করা হয় ।
বিক্রিয়া: গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] মেশালে FeSO4 দ্রবণের সঙ্গে HNO3 -এর বিক্রিয়ায় NO উত্পন্ন হয় । উত্পন্ন NO অবিকৃত FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রোসোফেরাস সালফেট Fe(NO)SO4 উত্পন্ন করে । এর রং বাদামী— এটি হল বাদামী বলয় ।
6FeSO4 + 3H2SO4 + 2HNO3 = 3Fe2(SO4)3 + 2NO + 4H2O
বর্তমান মতে উত্পন্ন NO, অবশিষ্ট FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাদামী বর্ণের [FeNO(H2O)5]SO4 যৌগ উত্পন্ন করে । FeSO4 + 6H2O = [Fe(H2O)6]SO4
[Fe(H2O)6]SO4 + NO = [Fe(NO)(H2O)5]SO4 + H2O
☼ নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন আছে —প্রমাণ :-
[i] একটি ফ্লাস্কে ঝামা পাথর রেখে লোহিত-তপ্ত করে ওর ওপর ফোঁটা ফোঁটা গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ফেলা হল । উত্পন্ন গ্যাসকে প্রথমে বরফে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে, পরে হিমমিশ্রে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে চালনা করা হল । এর ফলে শেষ U-টিউবের নির্গম-নল দিয়ে একটি বর্ণহীন গ্যাস নির্গত হতে দেখা যায় । এর মধ্যে শিখাহীন জ্বলন্ত পাটকাঠি ধরলে তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে এবং ওই গ্যাস ক্ষারীয় পাইরোগ্যালেট দ্রবণে শোষিত হয় । সুতরাং, গ্যাসটি O2 । এই অক্সিজেন [O2] নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] থেকে আসে ।
[ii] বরফে রাখা U-টিউবের মধ্যে বর্ণহীন তরল জমা হয় যা অনার্দ্র CuSO4 -কে নীল করে । সুতরাং, বর্ণহীন তরলটি হল জল । জলে H2 আছে, এই H2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে ।
4HNO3 = 2H2O + 4NO2 + O2 ↑
[iii] উত্তপ্ত কপারের ওপর দিয়ে নাইট্রিক অ্যাসিড বাষ্প চালনা করলে বর্ণহীন, গন্ধহীন একটি গ্যাস উত্পন্ন হয় । ওই গ্যাস জ্বলন্ত পাটকাঠিকে নিভিয়ে দেয় । ওই গ্যাসের মধ্যে জ্বলন্ত Mg জ্বলতে থাকে এবং বিক্রিয়া করে একটি সাদা পদার্থ উত্পন্ন করে যা ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া উত্পন্ন করে । সুতরাং সাদা যৌগটি নাইট্রাইড যৌগ যা N2 -এর সঙ্গে Mg -এর বিক্রিয়ায় উত্পন্ন হয় । তাই, বর্ণহীন গ্যাসটি নাইট্রোজেন । এই N2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে ।
5Cu + 2HNO3 = 5CuO + N2 ↑ + H2O
3Mg + N2 = Mg3N2, Mg3N2 + 6H2O = 3Mg(OH)2 + 2NH3
☼ নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার :-
[i] রসায়নগারে বিকারক হিসাবে যেমন— অ্যাসিডরূপে, জারক পদার্থরূপে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[ii] বিস্ফোরক পদার্থ যেমন— নাইট্রো গ্লিসারিন যা ডিনামাইট তৈরিতে কাজে লাগে, ট্রাই-নাইট্রোটলুইন, পিকরিক অ্যাসিড প্রস্তুতিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।
[iii] সার উত্পাদনে এবং নাইট্রেট লবণ তৈরিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।
[iv] সেলুলয়েড, ওষুধ, সুগন্ধী নাইলন, প্লাস্টিক, রেয়ন, কৃত্রিম রং, কৃত্রিম সিল্ক তৈরিতে HNO3 ব্যবহৃত হয় ।
[v] অম্লরাজ [Aqua regia] প্রস্তুতিতে এবং বিভিন্ন ধাতু ও ধাতু সংকর দ্রবীভূত করতে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[vi] ইলেকট্রোপ্লেটিং ও তড়িৎকোশে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[vii] তামা ও পিতলের ওপর দাগ কেটে নক্সা করতে, রকেটের জ্বালানির জারক পদার্থ হিসাবে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয়
0 comments:
Post a Comment