Pages

Saturday, September 1, 2018

মানবদেহ-রক্ত সংবহন তন্ত্র।



প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুই ভালোমত বুঝে মনে রাখতে হবে। অধ্যায়টি উপভোগ্যও বটে।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. রক্ত আন্তঃকোষীয় তরল যোজক কলা। (অন্তঃকোষীয় বলতে বোঝায় একটা কোষের মধ্যেই, আর আন্তঃকোষীয় বলতে একাধিক কোষের মধ্যে সম্পর্ক) (রক্তে ক্ষেত্রে যোজক কলা কথাটা একটু কনফিউজিং লাগতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন কোষের মধ্যে খাদ্য, অক্সিজেন, হরমোন, ইত্যাদির আদান প্রদানের মাধ্যম হল রক্ত, তাই রক্ত এক ধরনের যোজক কলা)

২. রক্ত সামান্য ক্ষারীয়, এর pH গড়ে ৭.২-৭.৪ । ( pH বেশি হওয়ার মানে H+ কম হওয়া)

৩. আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৬৫, পানির চেয়ে সামান্য বেশি। (যেহেতু রক্তে পানি বা তরল ছাড়াও বেশ কিছু কোষ থাকে)

৪. সুস্থ মানুষের দেহে রক্ত থাকে প্রায় ৫-৬ লিটার।

৫. রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে প্লাজমা বলে। (রক্ত দেখতে লাল, কারণ লোহিত কণিকার উপস্থিতির জন্য একে লাল দেখায়, কিন্তু কোন ভাবে লোহিত কণিকা সরানো হলে বাকি যে তরল অংশ পাওয়া যায়, তা দেখতে হলুদ)

৬. রক্তের প্লাজমায় পানির পরিমাণ ৯০-৯২%, এবং দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমাণ ৮-১০%। এর মধ্যে ৭.১-৮.১% জৈব এবং অজৈব উপাদান প্রায় ০.৯%।

৭. রক্তরসের বিভিন্ন কাজ:
  • খাদ্যসার (গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, লিপিড, লবণ, ভিটামিন) বিভিন্ন কোষে বয়ে নিয়ে যাওয়া।
  • কলা থেকে বর্জ্য পদার্থ রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যাওয়া।
  • অধিকাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তরসে বাইকার্বনেট রূপে দ্রবীভূত থাকে। (লক্ষ করা প্রয়োজন, রক্তরসের কাজ অক্সিজেন পরিবহন নয়, যা লোহিত কণিকার কাজ)
  • হরমোন, এনজাইম পরিবহন।
  • রক্তের অম্ল ক্ষারকের ভারসাম্য রক্ষা করে, pH যাতে একই থাকে।

৮. তিন রকমের রক্ত কণিকা আছে:
  • এরিথ্রোসাইট বা লোহিতকণিকা (এরিথ্রো মানে লাল)
  • লিউকোসাইট বা শ্বেতরক্তকণিকা (লিউকোপ্লাস্ট-এর মত বর্ণহীন বোঝাতে)
  • থ্রম্বোসাইট বা অণুচক্রিকা (থ্রম্বোসিস বা রক্ত তঞ্চন করে)

৯. লোহিত রক্ত কণিকা দ্বিঅবতল এবং নিউক্লিয়াসবিহীন। (একটা ফুটবলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, ফুটবলের পাম্প বেরিয়ে গেলে যেমন চুপসে যায়, দুই দিকের তলই নিচে নেমে যায়, লোহিত কণিকা তেমনি প্রথমে গোল থাকলেও নিউক্লিয়াস না থাকার ফলে চুপসে দ্বিঅবতল অবস্থায় চলে যায়)

১০. লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্চক কণিকা থাকে, যার ফলে কোষটিকে লাল দেখায়। হিমোগ্লোবিন ক্ষুদ্রতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি (যেমন বেগুনি, নীল) শোষণ করে, কিন্তু দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের লাল আলো শোষণ করে না প্রতিফলিত করে, তাই একে লাল দেখায়।

১১. ভ্রূণদেহে প্রতি ঘনমিমি তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে (৮০-৯০ লক্ষ) এবং পূর্ণবয়ষ্ক নারী দেহে সবচেয়ে কম থাকে (৪৫ লক্ষ)।

১২. প্রতি ঘন মিমি রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা প্রায় ৩৭.৫ লক্ষের চেয়ে কমে গেলে ওই অবস্থাকে রক্তস্বল্পতা (এনেমিয়া=এন+এমিয়া) বলে। আর ৬৫ লক্ষের চেয়েও বেড়ে গেলে এ অবস্থাকে বলে পলিসাইথেমিয়া। (পলি বলতেই বেশি কিছু বোঝায়)

১৩. ভ্রূণে লোহিত কণিকা যকৃত, প্লীহা (Spleen, পাকস্থলীর পিছনে থাকা একটি অঙ্গ) ও থাইমাস (গলার কাছের একটি গ্রন্থি) থেকে সৃষ্টি হয়। জন্মের পর ২০ বছর পর্যন্ত মানবদেহে পায়ের লম্বা অস্থি ফিমারের অস্থিমজ্জা থেকে এবং জীবনের বাকি সময় অন্যান্য অস্থিমজ্জা থেকেও উৎপন্ন হতে থাকে।

১৪. লোহিত কণিকার গড় আয়ু ৪ মাস বা প্রায় ১২০ দিন। (এজন্যই চার মাস পরপর রক্ত দেওয়ার কথা বলা হয়)

১৫. লোহিত কণিকা শরীরের সবখানে অক্সিজেন পরিবহন করে।

১৬. শ্বেতরক্তকণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত, আকারে বড়, আকৃতি পরিবর্তনশীল।

১৭. প্রতি ঘনমিমি রক্তে ৫-৮ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার অনুপাত ৭০০:১

১৮. শ্বেতরক্তকণিকাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়:
  • গ্র্যানিউলোসাইট (গ্র্যানিউল বিশিষ্ট বা দানাদার কোষ)
  • অ্যাগ্র্যানিউলোসাইট (গ্র্যানিউলহীন বা দানাহীন কোষ)

১৯. গ্র্যানিউলোসাইট তিন প্রকার। যথা:
  • নিউট্রোফিল (বর্ণ নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ, এসিডিক/অম্লীয় বা বেসিক/ক্ষারকীয় না)
  • ইওসিনোফিল (ইওসিন রঞ্জকে লাল রং ধারণ করে, একে এসিডোফিলিকও বলা চলে)
  • বেসোফিল (বেস বা ক্ষারকে নীল বর্ণ ধারণ করে)

২০. গ্র্যানিউলোসাইটের কাজ:
  • নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ভক্ষণ করে
  • ইওসিনোফিল ও বেসোফিল নিঃসৃত হিস্টামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • বেসোফিল নিঃসৃত হেপারিন ধমনী বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়

২১. অ্যাগ্র্যানিউলোসাইট দু’প্রকার। যথা:
  • লিম্ফোসাইট
  • মনোসাইট

২২. অ্যাগ্র্যানিউলোসাইটের কাজ:
  • লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং ফাইব্রোব্লাস্ট সৃষ্টি করে কলা বা টিস্যুর ক্ষয়পূরণ করে
  • মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগ জীবণূ ধ্বংস করে (নিউট্রোফিলের মত কাজ, তবে ভিন্ন ভাবে)
  • উভয়ের প্লাজমা প্রোটিন থেকে ট্রিফোন নামক কলাকোষের পুষ্টিকারক পদার্থ উৎপন্ন হয়।

২৩. থ্রম্বোসাইট বা অণুচক্রিকা ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা, নিউক্লিয়াসবিহীন।

২৪. প্রতি ঘনমিমি রক্তে থ্রম্বোসাইটের সংখ্যঅ আড়াই লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ। অসুস্থ দেহে আরও বেড়ে যায়।

২৫. থ্রম্বোসাইটের গড় আয়ু প্রায় ৫-১০ দিন।

২৬. থ্রম্বোসাইটের কাজ:
  • রক্ত তঞ্চন বা জমাট বাঁধায় অংশ নেয়
  • রক্তজালিকার ক্ষতিগ্রস্ত এপিথেলিয়াল আবরণ পুর্নগঠন অংশ নেয়
  • রক্তবাহিকার সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে

২৭. একটি তুলনা:
তুলনীয় বিষয়
এরিথ্রোসাইট
লিউকোসাইট
থ্রম্বোসাইট
সংখ্যা প্রতি ঘনমিমি রক্তে
প্রায় ৫০ লক্ষ
৫-৮ হাজার
২.৫-৫ লক্ষ
নিউক্লিয়াস
থাকে না
থাকে
থাকে না
বর্ণ
লাল
বর্ণহীন
বর্ণহীন
আয়ু
১২০ দিন
অজানা
৫-৯ দিন
আকৃতি
দ্বি-অবতল
গোলাকার বা অনিয়ত
অনিয়ত
প্রধান কাজ
অক্সিজেন পরিবহন
রোগ প্রতিরোধ
রক্ত জমাট বাঁধা

২৮. রক্তের কাজ:
  • অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন
  • খাদ্যসার, হরমোন, সঞ্চিত খাদ্য পরিবহন
  • জীবাণু প্রতিরোধ
  • রক্তপাত প্রতিরোধ
  • দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ
  • ক্ষত নিরাময়

২৯. রক্ত তঞ্চন পদ্ধতিতে ১৩ টি ফ্যাক্টর কাজ করে।

৩০. থ্রম্বোপ্লাস্টিন ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রো-থ্রম্বিন কে সক্রিয় থ্রম্বিন-এ পরিণত করে। এবং থ্রম্বিন ফাইব্রোজেন হতে ফাইব্রিন তৈরি করে। ফাইব্রিন জালকে রক্ত কোষ আটকে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

ক্রম: থ্রম্বোপ্লাস্টিন > ক্যালসিয়াম আয়ন + নিষ্ক্রিয় প্রো-থ্রম্বিন > থ্রম্বিন + ফাইব্রিনোজেন > ফাইব্রিন জালক > রক্ত তঞ্চন

৩১. শিরার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৫% এবং ধমনীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ২০% ।

৩২. কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত হয়।

৩৩. কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার রক্তকণিকায় কিছু অ্যান্টিজেন (A, B এবং O)-এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে রক্তের যে শ্রেণীবিন্যাস করেন, তা ABO ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।

৩৪. অ্যান্টিবডি জেনারেটর থেকে “অ্যান্টিজেন” শব্দের উৎপত্তি। অ্যান্টিবডি হল বাহির থেকে আসা অচেনা পদার্থের (অ্যান্টিজেনের) প্রতি সাড়া দিয়ে প্লাজমা B কোষ হতে উৎপন্ন প্রোটিনধর্মী পদার্থ, যা অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে একে নিষ্ক্রিয় ও ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

৩৫. যে অ্যান্টিবডির সঙ্গে অ্যান্টিজেনের বিক্রিয়ায় রক্তকণিকা জমাট বেঁধে যায়, তাকে অ্যাগ্লুটিনিন বলে।

৩৬. মানুষের রক্তে A B – এই দু’রকম অ্যান্টিজেন হতে পারে। কারো রক্তে A অ্যান্টিজেন থাকে কিন্তু B অ্যান্টিজেন থাকে না। তাই B অ্যান্টিজেন দেখলে বাইরের কোন প্রোটিন ভেবে এর বিরূদ্ধে অ্যান্টিবডি β (Anti-B) তৈরি করে। আবার কারও রক্তে B অ্যান্টিজেন থাকে, কিন্তু A অ্যান্টিজেন থাকে না। সেভাবে α (Anti-A) তৈরি করে।

৩৭. কারও রক্তে উভয় অ্যান্টিজেন থাকে, তাদের ব্লাড গ্রুপ AB, তাদের কোন অ্যান্টিবডি থাকে না, তাই A বা B গ্রুপের রক্ত এরা গ্রহণ করতে পারে, তাই এদের বলে সার্বজনীন গ্রহীতা।

৩৮. কারও কোনও অ্যান্টিজেন-ই থাকে না, তাদের ব্লাড গ্রুপ O, তারা A B উভয় অ্যান্টিজেনের প্রতিই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তবে O গ্রুপের রক্ত যে কাউকেই দেওয়া যায়, যেহেতু তাদের রক্তে A বা B কোন অ্যান্টিজেনই উপস্থিত থাকে না। তাই এদের সার্বজনীন দাতা বলে।

৩৯. রক্ত সঞ্চারণের সময় ব্লাড গ্রুপ ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। আপদকালীন সঞ্চারণকালে O গ্রুপের এবং Rh নেগেটিভ রক্ত সঞ্চারণ করা নিরাপদ।

৪০. ১৯৪০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার এবং উইনার মানুষের লোহিত কণিকার ঝিল্লীতে Rh ফ্যাক্টর আবিষ্কার করেন। কারও কারও রক্তে এই Rh ফ্যাক্টর থাকে না, এবং বাইরে থাকা আসা রক্তে Rh ফ্যাক্টর থাকলে এর বিরূদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ও রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

৪১. ইংল্যান্ড, আমেরিকার প্রভৃতি দেশের মানুষদের মধ্যে ৮৫% মানুষের Rh ফ্যাক্টর থাকে, এবং এশিয়া ও আফ্রিকায় ৯৫% মানুষের দেহে এই ফ্যাক্টর থাকে।

৪২. Rh ফ্যাক্টর ৬টি সাধারণ অ্যান্টিজেনের সমষ্টিবিশেষ, এদের ৩ জোড়ায় ভাগ করা যায়: যথা: C,c এবং D,d এবং E,e মানুষের দেহে এই ৩ জোড়ার প্রত্যেকটির একটি করে থাকে। যে রক্তে C,D,E (মেন্ডেলিয় প্রকট অ্যান্টিজেন)থাকে, সে রক্তকে Rh+ রক্ত বলে। প্রত্যেক Rh+ রক্তে D থাকতে বাধ্য। আর যে রক্তে c,d,e (মেন্ডেলিয় প্রচ্ছন্ন অ্যান্টিজেন) থাকে।

৪৩. একজন Rh নেগেটিভ মহিলার সঙ্গে Rh পজিটিভ পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তান হবে Rh পজিটিভ, কারণ Rh একটি প্রকট বৈশিষ্ট্য। শিশু যখন মায়ের দেহে থাকবে, তখনই শিশুর দেহে সৃষ্ট Rh ফ্যাক্টরের বিরূদ্ধে মায়ের দেহে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়। প্রথম সন্তান জীবিত থাকলেও দেহে প্রচণ্ড রক্তস্বল্পতা ও জন্মের পর জন্ডিস দেখা যায়। এ অবস্থাকে এরিথ্রো-ব্লাস্টোসিস ফিটালিস (এরিথ্রো=লোহিত কণিকা, ব্লাস্টোসিস=যেহেতু Rh ফ্যাক্টরের অ্যান্টিবডি রক্তকে জমাট বেঁধে দেয়, ফিটালিস=ফিটাস অবস্থার কথা বোঝানো হয়) বলে।

৪৪. Rh নেগেটিভ রক্ত দুর্লভ। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ১৫% মানুষের এমন রক্ত রয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী পাহাড় অঞ্চল পাইরেনীজ-এর বাস্ক-এ সবচেয়ে বেশি এমন রক্ত পাওয়া যায়, ২৫-৩৫%। এছাড়াও আফ্রিকার বার্বার ও সাইনাই উপদ্বীপের বেদুঈন-এও এমন রক্ত বেশি পাওয়া যায়, ১৮-৩০%। এশিয়াতে অনেক কম, প্রায় ৫%।

৪৫. মানুষের রক্ত সংবহন তন্ত্র পাঁচটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা:
  • রক্ত
  • হৃদপিণ্ড
  • ধমনী
  • শিরা
  • কৈশিক জালিকা

৪৬. হৃদপিণ্ড রক্ত পরিশুদ্ধ করে না, এটি একটি পাম্প যন্ত্র যা অক্সিজেন কম থাকা রক্তকে অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ফুসফুসে প্রেরণ করে এবং অক্সিজেন যুক্ত রক্ত ফুসফুস থেকে হৃদপিণ্ডে আসার পর সারা দেহে ছড়িয়ে দেবার জন্য পাম্প করে।

৪৭. একজন সুস্থ মানুষের হৃদপিণ্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়, প্রতিটি নিলয় হতে ১৫৫ লিটার রক্ত বের করে দেয়।

৪৮. পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষের হৃদপিণ্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম এবং মহিলার হৃদপিণ্ডের ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম।

৪৯. হৃদপিণ্ড দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা ঝিল্লী দ্বারা আবৃত। এর বাইরের স্তর “প্যারাইটাল পেরিকার্ডিয়াম” (যার অর্থ দেয়াল, করোটির একটি অস্থির নাম) এবং ভেতরের স্তর “ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়াম”।

৫০. হৃদপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত, ডান দিকে উপরে ডান অলিন্দ, নিচে ডান নিলয়, বাম দিকে উপরে বাম অলিন্দ এবং নিচে বাম নিলয়। (বই-এর চিত্র কনফিউজিং লাগতে পারে, কিন্তু সবসময় মনে রাখা উচিৎ, যে মানুষটির হৃদপিণ্ড দেখছি, ঐ মানুষটির ডান দিক আমাদের দিক থেকে বাম দিক এবং ঐ মানুষটির বাম দিক আমাদের জন্য ডান দিক, এজন্য আমাদের জন্য যে দিক বাম দিক, সেদিকে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে, যা ঐ ব্যক্তির সাপেক্ষে ডান দিক, এবং অনুরূপ ভাবে আমাদের জন্য ডান দিকে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে, যা ঐ মানুষটির সাপেক্ষে বাম দিক)

৫১. ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা থাকে এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে বাইকাসপিড কপাটিকা থাকে। (বাম=ব=বাইকাসিপিড, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)

৫২. ডান নিলয় থেকে পালমোনারী বা ফুসফুসীয় ধমনীর ছিদ্রপথে এবং বাম নিলয় থেকে সৃষ্ট অ্যাওর্টা বা মহাধমনীর মুখের কপাটিকা দু’টি অর্ধ চন্দ্রাকার বা সেমিলুনার।


৫৩. হৃদপিণ্ড প্রাচীর তিনটি পৃথক স্তরে গঠিত; যথা:
  • এপিকার্ডিয়াম (বাইরের স্তর)
  • মায়োকার্ডিয়াম
  • এন্ডোকার্ডিয়াম (ভেতরের স্তর)
৫৪. মায়োকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডের সংকোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

৫৫. হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো এন্ডোকার্ডিয়ামে গঠিত (যেহেুতু ভেতরের স্তর)

৫৬. হৃদপিণ্ড সাধারণ অবস্থায় মিনিটে ৭০-৮০ বার হৃদস্পন্দন দেয়। সংকোচন কে বলে সিস্টোল ওবং প্রসারণকে বলে ডায়াস্টোল (সংকোচন=স=সিস্টোল, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)

৫৭. রক্তের গতিপথ:
  • প্রথমে সারা দেহ থেকে অক্সিজেন কম থাকার রক্ত মহাধমনী দিয়ে ডান অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর ডান নিলয়ে যায়, এরপর পালমোনারী বা ফুসফুসীয় ধমনী দিয়ে ফুসফুসে যায়, সেখানে রক্তে অক্সিজেন যুক্ত হয়।
  • এরপর অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে পালমোনারী বা ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, পরে বাম নিলয়ে যায়, এরপর মহাধমনী দিয়ে সারা দেহে যায় ও কৈশিক জালিকায় গিয়ে শেষ হয়।
(অলিন্দের সাথে যুক্ত রক্তনালিকা শিরা, আর নিলয়ের সাথে সংযুক্ত রক্তনালিকা ধমনী)

৫৮. হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৭০-৮০ বার বা গড়ে ৭৫ বার, এভাবে হিসেবে করলে প্রতিটি হৃদস্পন্দনের স্থায়িত্ব ০.৮ সেকেন্ড।


৫৯. কার্ডিয়াক চক্র:
  • অলিন্দের ডায়াস্টোল = ০.৭ সেকেন্ড
  • অলিন্দের সিস্টোল = ০.১ সেকেন্ড
  • নিলয়ের সিস্টোল = ০.৩ সেকেন্ড
  • নিলয়ের ডায়াস্টোল = ০.৫ সেকেন্ড

৬০. ধমনী হচ্ছে নিলয় হতে সৃষ্ট এবং কৈশিক জালিকায় গিয়ে শেষ হওয়া রক্ত নালিকা যা অধিকাংশ সময় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে, (পালমোনারী ধমনী ব্যতিক্রম)। অন্য দিকে শিরা কৈশিক জালিকা থেকে সৃষ্টি হয়ে অলিন্দে এসে যুক্ত হয় যা বেশির ভাগ অক্সিজেন কম থাকা রক্ত বহন করে, (পালমোনারী শিরা ব্যতিক্রম)।

৬১. ধমনী প্রাচীর তিন স্তর বিশিষ্ট, যথা:
  • টিউনিকা এক্সটার্না – বাইরের স্তর – যোজক কলায় গঠিত
  • টিউনিকা মিডিয়া – মাঝের স্তর – পেশীতন্তু নির্মিত
  • টিউনিকা ইন্টিমা – ভেতরের স্তর – এন্ডোথেলিয়ালে গঠিত

৬২. শিরার প্রাচীর সংখ্যাও ৩, কিন্তু তা স্থিতিস্থাপক নয়।

৬৩. কৈশিক জালিকা : শুধুমাত্র একস্তর বিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়ালে গঠিত খুবই সূক্ষ্ম রক্ত বাহিকা, যেখানে সহজে অক্সিজেন কোষে প্রবেশ করতে পারে, ও কোষ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড কৈশিক জালিকায় প্রবেশ করতে পারে।

৬৪. ধমনী ও শিরার পার্থক্য:
তুলনীয় বিষয়
ধমনী
শিরা
উৎপত্তিস্থল
হৃদপিন্ডের নিলয়
কৈশিক জালিকা
সমাপ্তিস্থল
কৈশিক জালিকা
হৃদপিণ্ডের অলিন্দ
গহরের ব্যাস
ছোট
অপেক্ষাকৃত বড়
কপাটিকা
নেই
আছে (যেহেুতু বড়, তাই কপাটিকা আছে)
স্থিতিস্থাপকতা
আছে
নেই

৬৫. মানবদেহে প্রধানত দু’ধরনের রক্তসংবহন চক্র রয়েছে। যথা:
  • সিস্টেমিক সংবহন চক্র: দেহ থেকে অক্সিজেন কম থাকা রক্ত হৃদপিণ্ডে আসে ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে আবার দেহে রক্ত পৌছায়।
  • পালমোনারী সংবহন চক্র: হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন কম থাকা রক্ত ফুসফুসে নিয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ করে আবার হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে (পরে তা হৃদপিণ্ড সিস্টেমিক সংবহনের মাধ্যমে সারা দেহে পাঠায়)।

৬৬. পোর্টাল তন্ত্র: প্রধান দু’টো সংবহন চক্র ছাড়ায় রক্ত কিছুটা পার্শ্বপথ অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে শিরা হৃদপিণ্ডে না গিয়ে মাধ্যমিক অঙ্গে প্রবেশ করে সেখানে আবার কৈশিক জালিকায় বিভক্ত হয়ে আবার শিরা গঠন করে। এরপর রক্ত হৃদপিণ্ডে পৌছায়। প্রধানত দু’ধরনের পোর্টাল তন্ত্র রয়েছে:
  • হেপাটিক: যকৃতে ঘটে
  • রেনাল: বৃক্কে ঘটে

৬৭. হৃদপিণ্ডের হৃদপেশীতে রক্ত সঞ্চালনকারী সংবহনকে করোনারী রক্ত সংবহন বলে।

৬৮. রক্ত প্রবাহের সময় ধমনীর প্রাচীরে প্রবাহের দিকের সাথে লম্বভাবে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হয়, একে রক্ত চাপ বলে।

৬৯. সুস্থ প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষে সিস্টোলিক চাপ প্রায় ১২০ মিমি পারদ স্তম্ভের সমান। ডায়াস্টোলিক চাপ প্রায় ৮০ মিমি পারদ স্তম্ভ।

৭০. কোন ব্যক্তির রক্তচাপ সিস্টোলিক অবস্থায় ১৬০ মিমি পারদস্তম্ভ বা এর চেয়ে বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক অবস্থায় ৯৫ মিমি পারদস্তম্ভের বা এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।

৭১. কৈশিক জালিকার প্রাচীর ভেদ করে রক্তের কিছু উপাদান কোষের চারপাশে অবস্থান করে যাদের “কলারস” বলা হয়। কলারসে লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা, প্লাজমা প্রোটিন থাকে, সাধারণত শ্বেতকণিকা থাকে। এই কলারস কৈষিক জালিকা ছাড়াও আর এক ধরনের বদ্ধ নালী দ্বারা গৃহীত ও পরিবাহিত হয়ে পুনরায় রক্তে ফিরে আসে। এই নালীগুলোকে লসিকা নালী বলে এবং বহনকারী স্বচ্ছ কলারসকে লসিকা বলে।

৭২. লসিকার আপেক্ষিক গুরুত্ব = ১.০১৫১ (রক্তের ক্ষেত্রে ১.০৬৫)

৭৩. লসিকা নালীর ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে লসিকা গ্রন্থি যা বিভিন্ন জীবাণু ও ক্ষতিকর কোষের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।

৭৪. লসিকানালী হতে প্রতিদিন প্রায় ১২০০-২২৮০ মিমি লসিকা নির্গত হয়।

৭৫. প্লাজমা, লসিকা ও সিরাম-এর মধ্যে পার্থক্য:
তুলনীয় বিষয়
প্লাজমা
লসিকা
সিরাম
প্রকৃতি
রক্তের জলীয় অংশ
কৈশিক জালিকা থেকে চু্ঁইয়ে পড়া স্বচ্ছ কোষরস
রক্ত জমাট বাঁধার পর বা রক্ত তঞ্চনের পর তঞ্চিত পদার্থ নিঃসৃত জলীয় অংশ
রক্তকণিকার উপস্থিতি
লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা
প্রধানত শ্বেতরক্তকণিকা
কোন রক্ত কণিকাই থাকে না।
ফাইব্রিনোজেনের উপস্থিতি
বিপুল পরিমাণে
সামান্য পরিমাণে
অনুপস্থিত
অবস্থান
প্রধান রক্ত বাহিকায় ও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে
কোষের মাঝে থাকা ফাঁকা স্থান বা কোষান্তরে
সাধারণ অবস্থায় দেহের মধ্যে থাকে না




Friday, August 10, 2018

বিজ্ঞান-ই মুসলমানদের অবদান



বর্তমান বিশ্বে মুসলমানগণ খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তাঁরা মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এসব বিষয়ে অমুসলিমদেরই নাকি অবদান। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার ইতিহাসটা কি? এটা মুসলমানদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আর এমন কিছু ইতিহাস নিয়েই আজকের এ লেখা। মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।

বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ছিল মুসলমানদের অনেক অবদান। বিশেষত বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের ছিল সবচেয়ে বেশি অবদান। মুসলমান বিজ্ঞানীরা মনে করতেন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এ তিনটি শাখার উপর জ্ঞ্যান অর্জন করা আবশ্যক। এ তিনটি শাখা হচ্ছে প্রথম- মহাকাশ বিজ্ঞান, দ্বিতীয়- গণিত, তৃতীয়- চিকিৎসা বিজ্ঞান।


মহাকাশ বিজ্ঞান প্রয়োজন- চাঁদ এবং সূর্যের হিসাব নিকাশ বুঝতে। যেহেতু চাঁদের হিসাবটা বিশেষ বিশেষ দিন এবং বিশেষ বিশেষ মাস বের করা প্রয়োজন। আর সূর্যের হিসাবটা নামাযের ওয়াক্ত এবং অন্যান্য বিশেষ ওয়াক্ত বের করার জন্য প্রয়োজন।

আর গণিতটা প্রয়োজন- গণিত ছাড়াতো মহাকাশ বিজ্ঞান চিন্তাই করা যায়না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করাও সুন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য হিসাব করতে গণিত লাগে। আবার ফারায়েজের মাসয়ালা অর্থাৎ সম্পত্তি বন্টনের জন্যও গণিত প্রয়োজন। আবার মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নামায শেষ হওয়ার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর।” কোথাও যেতে হলে ম্যাপের দরকার। ম্যাপটা হলো ভূগোলের অংশ আর ভূগোলটা জ্যামিতির অংশ, জ্যামিতিও ওই গণিতের অংশ। ঐ আবার গিয়ে গণিতই লাগে।

আর চিকিৎসা বিজ্ঞানটা প্রয়োজন, কারণ চিকিৎসা করা সুন্নত। সুতরাং এ সুন্নত পালনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করার প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা না করা হয় তাহলে চিকিৎসার সুন্নতটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর একটা সুন্নতকে বিলুপ্ত করার মতো কবীরা গুণাহতো আর কিছু হতে পারেনা। এছাড়াও জান বাঁচানোতো ফরয। সূতরাং সে ফরয আদায়ের জন্যও তো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞান যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু মুসলমানরা মহাকাশ বিজ্ঞানটা শেখার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানটাও চর্চা করতেন। আবার যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে রসায়ন একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত সেহেতু মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানটা শেখার জন্য রসায়নটাও চর্চা করতেন। যার কারণে এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে মুসলমানদের অনেক বেশি অবদান ছিল। এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার ইতিহাস পড়লেই এগুলো জানা যাবে।

আমরা তাহলে দেখতে পারলাম- গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ পাঁচটা শাখার উপর মুসলমানদের খুব বেশি অবদান ছিল।  কি ধরণের অবদান ছিল সে বিষয়েও আমাদের  জানা প্রয়োজন।

প্রথমেই আসি গণিতে-

গণিতে মুসলমানদের অবদানসবচেয়ে বেশি । আর গণিতের শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার।

সংখ্যাতত্ত্ব:

আমরা যে সংখ্যা গুণি, ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯।   এই সংখ্যার যে এক-এর পরে শূণ্য দিলে দশ (১০) হয়; এটাই মুসলমানদের আবিষ্কার। এটা আবিষ্কার করেছেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী। উনিই প্রথম বলেছেন যে, এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ হয়।

এর আগে যেগুলো ছিল ওগুলি অনেক কঠিন ছিল। যেমন- রোমান সংখ্যা। তাদের সংখ্যা ছিল এক, পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ, এক’শ, পাঁচ’শ, এক হাজার, পাঁচ হাজার এরকম সংখ্যা। এগুলোর সাথে যোগ বিয়োগ করে আমি যেটা চাই সেটা বানিয়ে নিতে হতো। আর ইন্ডিয়ান সংখ্যাটা যেরকম ছিল- এক থেকে নয় পর্যন্ত নয়টা সংখ্যা, আবার দশ থেকে নব্বই পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা, আবার একশ থেকে নয়শ পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা। এরকম অনেক সংখ্যা। তো ইন্ডিয়ান সংখ্যা কিছুটা সোজা হলেও সংখ্যা এতো বেশি যে সংখ্যা মনে রাখতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মূসা আল খারিজমী উনি সুন্দর একটা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন যে, একের পর শূন্য দিলেই দশ হয়ে যায়। দশ সংখ্যাই অংক শেষ।

বীজ গণিত:

এটাও মূসা আল খারিজমী উনারই আবিষ্কার। উনাকে অবশ্য মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গণিতবীদ হিসেবে ধরা হয়। এই আধুনিক বীজ গণিত যেটা, এটা উনিই আবিস্কার করে দিয়ে গেছেন। এর আগে যে বীজ গণিত ছিল সেগুলো এতো জটিল যে, আসলে বুঝাটা খুবই কঠিন। উনি যেটা আবিস্কার করে দিয়েছেন এটা খুবই সোজা এবং এখন পর্যন্ত এটাই চলে আসতেছে। বীজ গণিত ইংরেজী হচ্ছে Algebra (এ্যালজেবরা)। মূসা ইবনে খারিজমী যে বইটা লিখেছিলেন সেটা হচ্ছে, ‘কিতাবুল জাবির ওয়াল মুকারাবা’। ঐ আল জাবিরটাকেই (الجبر, al-ğabr) পরে তারা বানিয়ে ফেলছে এ্যালজাবরা(algebra)

আর বীজগণিতের উপর যত অবদান সবই মুসলমানদের। যেমন বীজ গণিতের মধ্যে ‘পাওয়ার’এর যে সিস্টেমটা; এটাও মুসলমানদেরই আবিস্কার। আবু কামিল নামে একজন মুসলমান গণিতবিদ ছিলেন উনি এটা প্রথম চালু করেন। পাওয়ার, রুট এগুলোর সিস্টেম। তারপরে অংকের যে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এই চিহ্ণগুলিও মুসলমানদেরই দেয়া। এই চিহ্ণগুলি আবিস্কার করেছিলেন, আবুল হাসান ইবনে আলী কালাসাদি।

মুসলিম মনীষা গ্রন্থের মতে, মুহম্মদ মুসা আল খারিজমির বীজগণিত প্রাঞ্জল ও সরল ভঙ্গিতে লেখা, তাতে প্রায় ৮০০ ধরনের উদাহরণ দেয়া আছে। তিনি একত্রীকরণ ও দুই ডিগ্রির সমীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করে তার হরণ ও পূরক সম্পর্কেও বর্ণনা দিয়েছেন। সমীকরণকে সমাধান করার প্রায় ছয়টি নিয়ম তিনি আবিষ্কার করেন।

আমরা অংকের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোন অজানা মানকে X অথবা Y হিসেবে ধরে নিয়ে তার সমাধান বের করি। এই পদ্ধতিটাও আল খারিজমির আবিস্কার দেয়া।

আমরা সাধারণত কোন সমীকরণ সমাধান করে যখন X অথবা Y-এর একটি করে মান পাই। যেগুলো এক ঘাত সমীকরণ নামে পরিচিত। আবার দ্বিঘাত সমীকরণে দুটি মান পাওয়া যায়। এই দুই ধরণের সমীকরণের বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখা তুলে ধরেন আলখারিজমি।
যেমন X+1=0, এটি একটি একঘাত সমীকরণ যার একটি মান 1। আবার X2-5X+6=0 একটি দ্বিঘাত সমীকরণ যেখানে এর মান দুটি 3 অথবা 2.
তাঁর এলজাবরা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে গণিত জগতে এর উপযোগীতা অভাবনীয় বেড়ে যায়। মধ্যযুগের আর কোন গণিতবিদই গণিত জগতে তার সমান্তরাল কর্ম উপস্থাপন করে যেতে পারেননি। তিনি গণিতের লগারিদম শাখাটিও তিনি উন্নয়ন করেন।

আল-জাবির ওয়াল-মুকাবিলা:

বীজগণিতের উপর লেখা তাঁর এ বইটি সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। এই বইটির নাম অনুসারে এলজেবরা বা বীজগণিত নামকরণ করা হয়। এ বইটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় দ্বাদশ শতকে। অনুবাদ কর্মের মধ্য দিয়ে এই নতুন বিজ্ঞান পশ্চিমা জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়। এর আগে ইউরোপের কাছে বীজগণিত ছিলো একটি অচেনা বিষয়। ইউরোপীয়রা এ বিষয়ে ছিলো পুরোপুরি অজ্ঞ।

ছবি: আল খারিজমির ‘কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’ কিতাবের একটি পৃষ্ঠা
ছবি: আল খারিজমির ‘কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’ কিতাবের একটি পৃষ্ঠা
এক নজরে `কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’:
বইটি পাঁচখন্ডে বিভক্ত।
প্রথম অংশে তিনি দ্বিঘাত সমীকরণগুলোকে ছয়ভাগে বিভক্ত করে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আলোচনা করেন। দ্বিঘাত সমীকরণে যে দুটো মূল বিষয় খারেজমী সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন। এবং এটি সমাধান করেন।
দ্বিতীয় অংশে তিনি বীজগণিতের সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করেন।
চতুর্থ খন্ডে তিনি করণী অপসারণ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।
দশম শতাব্দীর ইউসূফ রচিত ‘মাফাতিহুল উলুম’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।

দ্বিঘাত সমীকরণ:

এটাও আবিস্কার করেছেন মুসলমানরা। তারপরে দ্বিপদী উপপাদ্য; এটাও প্রথম দেন মুসলমানরা। আবু বক্বর ইবনে হুসাইন আল কারাজি প্রথম এই দ্বিপদী উপপাদ্যটা দেন। পরবর্তীতে ওমর খাইয়াম আবার এই দ্বিপদী উপপাদ্যটার উপর আরো কাজ করেন এবং উনি এই দ্বিপদী উপপাদ্যের মাধ্যমেই যেকোন সংখ্যার যেকোন তম রুট বের করার একটা পদ্ধতি বের করেন। পরবর্তীতে পদ্ধতিটা হারিয়ে যায় তবে উনি যে এই পদ্ধতিটা বের করেছিলেন এটা অন্যান্য মুসলমান বিজ্ঞানীদের বইয়ে এই পদ্ধতিটা পাওয়া যায়।

ত্রিকোণমীতি:

এটার উপরেও মুসলমানদের অনেক অবদান। রোমানরা ত্রিকোণমীতি প্রথম আবিস্কার করে কিন্তু রোমানরা ত্রিকোণমীতির যে ব্যাখ্যা দিত, সে ব্যাখ্যা শুনে মানুষ ত্রিকোণমীতি বিমুখ ছিল। পরবর্তীতে মুসলমান একজন গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে জাবির আল হারানী ওয়াল বাত্তানী তিনি প্রথম ত্রিকোণমীতি সম্পর্কে সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। যারফলে আবার সবাই ত্রিকোণমীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। উনি অনেকগুলো ত্রিকোণমীতির ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন একটা ফর্মুলা আছে ten=sin/cos আবার ten এর টেবিলটাও মুসলমানদের আবিস্কার করা। এটা আবিস্কার করেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী।

তারপরে এ্যালগরিদম তৈরী করার পদ্ধতিটাও মুসলমানদেরই করা। আবু জাফর মুহম্মদ মূসা ইবনে আল খারিজমী প্রথম এটা আবিস্কার করেন। এই এ্যালগরিদমের ফর্মুলাটা প্রয়োগ করেই কম্পিউটারের ক্যালকুলেশনের লজিকটা তৈরী করা হয়। এক কথায় আসলে বর্তমানে কম্পিউটারের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদেও অবদান রয়ে গেছে। উনি যদি এ্যালগরিদম তৈরীর পদ্ধতিটা আবিস্কার না করতেন তাহলে হয়তো বর্তমানে কম্পিউটার আবিস্কার নাও হতে পারতো।

তথ্যসূত্র:

উইকিপিডিয়া

Wednesday, May 9, 2018

ইসলামের ইতিহাস: বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান (পর্ব-গণিত)

বর্তমান বিশ্বে মুসলমানগণ খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তাঁরা মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এসব বিষয়ে অমুসলিমদেরই নাকি অবদান। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার ইতিহাসটা কি? এটা মুসলমানদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আর এমন কিছু ্ইতিহাস নিয়েই আজকের এ লেখা। মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।
বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ছিল মুসলমানদের অনেক অবদান। বিশেষত বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের ছিল সবচেয়ে বেশি অবদান। মুসলমান বিজ্ঞানীরা মনে করতেন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এ তিনটি শাখার উপর জ্ঞ্যান অর্জন করা আবশ্যক। এ তিনটি শাখা হচ্ছে প্রথম- মহাকাশ বিজ্ঞান, দ্বিতীয়- গণিত, তৃতীয়- চিকিৎসা বিজ্ঞান।
মহাকাশ বিজ্ঞান প্রয়োজন- চাঁদ এবং সূর্যের হিসাব নিকাশ বুঝতে। যেহেতু চাঁদের হিসাবটা বিশেষ বিশেষ দিন এবং বিশেষ বিশেষ মাস বের করা প্রয়োজন। আর সূর্যের হিসাবটা নামাযের ওয়াক্ত এবং অন্যান্য বিশেষ ওয়াক্ত বের করার জন্য প্রয়োজন।
আর গণিতটা প্রয়োজন- গণিত ছাড়াতো মহাকাশ বিজ্ঞান চিন্তাই করা যায়না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করাও সুন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য হিসাব করতে গণিত লাগে। আবার ফারায়েজের মাসয়ালা অর্থাৎ সম্পত্তি বন্টনের জন্যও গণিত প্রয়োজন। আবার মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নামায শেষ হওয়ার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর।” কোথাও যেতে হলে ম্যাপের দরকার। ম্যাপটা হলো ভূগোলের অংশ আর ভূগোলটা জ্যামিতির অংশ, জ্যামিতিও ওই গণিতের অংশ। ঐ আবার গিয়ে গণিতই লাগে।
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানটা প্রয়োজন, কারণ চিকিৎসা করা সুন্নত। সুতরাং এ সুন্নত পালনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করার প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা না করা হয় তাহলে চিকিৎসার সুন্নতটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর একটা সুন্নতকে বিলুপ্ত করার মতো কবীরা গুণাহতো আর কিছু হতে পারেনা। এছাড়াও জান বাঁচানোতো ফরয। সূতরাং সে ফরয আদায়ের জন্যও তো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞান যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু মুসলমানরা মহাকাশ বিজ্ঞানটা শেখার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানটাও চর্চা করতেন। আবার যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে রসায়ন একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত সেহেতু মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানটা শেখার জন্য রসায়নটাও চর্চা করতেন। যার কারণে এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে মুসলমানদের অনেক বেশি অবদান ছিল। এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার ইতিহাস পড়লেই এগুলো জানা যাবে।
আমরা তাহলে দেখতে পারলাম- গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ পাঁচটা শাখার উপর মুসলমানদের খুব বেশি অবদান ছিল।  কি ধরণের অবদান ছিল সে বিষয়েও আমাদের  জানা প্রয়োজন। যেমন-
গণিতে মুসলমানদের অবদানসবচেয়ে বেশি । আর গণিতের শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার। যেমন- প্রথমেই যেটা আসে সেটা হচ্ছে, আমরা যে সংখ্যা গুণি, ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯।   এই সংখ্যার যে এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ (১০) হয়; এটাই মুসলমানদের আবিষ্কার। এটা আবিষ্কার করেছেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী। উনিই প্রথম বলেছেন যে, এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ হয়। এর আগে যেগুলো ছিল ওগুলি অনেক কঠিন ছিল। যেমন- রোমান সংখ্যা। তাদের সংখ্যা ছিল এক, পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ, এক’শ, পাঁচ’শ, এক হাজার, পাঁচ হাজার এরকম সংখ্যা। এগুলোর সাথে যোগ বিয়োগ করে আমি যেটা চাই সেটা বানিয়ে নিতে হতো। আর ইন্ডিয়ান সংখ্যাটা যেরকম ছিল- এক থেকে নয় পর্যন্ত নয়টা সংখ্যা, আবার দশ থেকে নব্বই পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা, আবার একশ থেকে নয়শ পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা। এরকম অনেক সংখ্যা। তো ইন্ডিয়ান সংখ্যা কিছুটা সোজা হলেও সংখ্যা এতো বেশি যে সংখ্যা মনে রাখতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মূসা আল খারিজমী উনি সুন্দর একটা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন যে, একের পর শূন্য দিলেই দশ হয়ে যায়। দশ সংখ্যাই অংক শেষ।
তারপরে আবার বীজ গণিত। এটাও মূসা আল খারিজমী উনারই আবিষ্কার। উনাকে অবশ্য মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গণিতবীদ হিসেবে ধরা হয়। এই আধুনিক বীজ গণিত যেটা, এটা উনিই আবিস্কার করে দিয়ে গেছেন। এর আগে যে বীজ গণিত ছিল সেগুলো এতো জটিল যে, আসলে বুঝাটা খুবই কঠিন। উনি যেটা আবিস্কার করে দিয়েছেন এটা খুবই সোজা এবং এখ পর্যন্ত এটাই চলে আসতেছে। বীজ গণিত ইংরেজী হচ্ছে এ্যালজেবরা। এ শব্দটাওতো আগে থেকে আসছে। মূসা ইবনে খারিজমী যে বইটা লিখেছিলেন সেটা হচ্ছে, ‘কিতাবুল জাবির ওয়াল মুকারাবা’। ঐ আল জাবিরটাকেই পরে তারা বানিয়ে ফেলছে এ্যালজাবরা(algebra)।
তারপরে দ্বিঘাত সমীকরণ; এটাও আবিস্কার করেছেন মুসলমানরা। তারপরে দ্বিপদী উপপাদ্য; এটাও প্রথম দেন মুসলমানরা। আবু বক্বর ইবনে হুসাইন আল কারাজি প্রথম এই দ্বিপদী উপপাদ্যটা দেন। পরবর্তীতে ওমর খাইয়াম আবার এই দ্বিপদী উপপাদ্যটার উপর আরো কাজ করেন এবং উনি এই দ্বিপদী উপপাদ্যের মাধ্যমেই যেকোন সংখ্যার যেকোন তম রুট বের করার একটা পদ্ধতি বের করেন। পরবর্তীতে পদ্ধতিটা হারিয়ে যায় তবে উনি যে এই পদ্ধতিটা বের করেছিলেন এটা অন্যান্য মুসলমান বিজ্ঞানীদের বইয়ে এই পদ্ধতিটা পাওয়া যায়। আর বীজগণিতের উপর যত অবদান সবই মুসলমানদের। যেমন বীজ গণিতের মধ্যে ‘পাওয়ার’এর যে সিস্টেমটা; এটাও মুসলমানদেরই আবিস্কার। আবু কামিল নামে একজন মুসলমান গণিতবিদ ছিলেন উনি এটা প্রথম চালু করেন। পাওয়ার, রুট এগুলোর সিস্টেম। তারপরে অংকের যে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এই চিহ্ণগুলিও মুসলমানদেরই দেয়া। এই চিহ্ণগুলি আবিস্কার করেছিলেন, আবুল হাসান ইবনে আলী কালাসাদি।
তারপরে ত্রিকোণমীতি; এটার উপরেও মুসলমানদের অনেক অবদান। রোমানরা ত্রিকোণমীতি প্রথম আবিস্কার করে কিন্তু রোমানরা ত্রিকোণমীতির যে ব্যাখ্যা দিত, সে ব্যাখ্যা শুনে মানুষ ত্রিকোণমীতি বিমুখ ছিল। পরবর্তীতে মুসলমান একজন গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে জাবির আল হারানী ওয়াল বাত্তানী তিনি প্রথম ত্রিকোণমীতি সম্পর্কে সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। যারফলে আবার সবাই ত্রিকোণমীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। উনি অনেকগুলো ত্রিকোণমীতির ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন একটা ফর্মুলা আছে ‎ten=sin/cos আবার ‎ten এর টেবিলটাও মুসলমানদের আবিস্কার করা।এটা আবিস্কার করেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী।
তারপরে এ্যালগরিদম তৈরী করার পদ্ধতিটাও মুসলমানদেরই করা। আবু জাফর মুহম্মদ মূসা ইবনে আল খারিজমী প্রথম এটা আবিস্কার করেন। এই এ্যালগরিদমের ফর্মুলাটা প্রয়োগ করেই কম্পিউটারের ক্যালকুলেশনের লজিকটা তৈরী করা হয়। এক কথায় আসলে বর্তমানে কম্পিউটারের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদেও অবদান রয়ে গেছে। উনি যদি এ্যালগরিদম তৈরীর পদ্ধতিটা আবিস্কার না করতেন তাহলে হয়তো বর্তমানে কম্পিউটার আবিস্কার নাও হতে পারতো।
পোষ্ট পড়ার জন্য ,সবাইকে অনেক অনেক শুকরিয়া।

Tuesday, January 9, 2018

কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিত কেমন ছিল?






সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল।তখন মানুষ মহাবিশ্ব,পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না। এই যেমন-
সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,
১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।
৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।
৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।
৫. বাচ্চার লিঙ্গের জন্য মা দায়ী।
৬. গাছের লিঙ্গ নেই।
৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা যাক।

১। আকাশের খুটিঃ
সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান খুটি নেই।

"তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)

আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।

২। মহাবিশ্বের আদি অবস্থাঃ

আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় একত্রে ছিল।চলুন দেখি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে-
"অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল স্বেচ্ছায় আসলাম।" (সূরা হামিম আস সিজদাহ : ১১)।

কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো!

৩।মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতাঃ

"আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী" (সূরা জারিয়াত : ৪৭)

মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই কিছুদিন আগে প্রমানিত হয়েছে। বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে যাচ্ছে।
 

Blogger news

Blogroll

About