Pages

Thursday, February 16, 2017

ছায়াপথ, একটি বিস্ময়



ছায়াপথ মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি অতি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যা তারা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাসমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১০ মিলিয়ন থেকে এক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত তারা থাকে যারা সবাই একটি সাধারণ মহাকর্ষীয় কেন্দ্রের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। বিচ্ছিন্ন তারা ছাড়াও ছায়াপথে বহুতারা ব্যবস্থা, তারা স্তবক এবং বিভিন্ন ধরনের নীহারিকা থাকে। অধিকাংশ ছায়াপথের ব্যস কয়েকশ আলোকবর্ষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত এবং ছায়াপথসমূহের মধ্যবর্তী দূরত্ব মিলিয়ন আলোকবর্ষের পর্যায়ে।
ছায়াপথের শতকরা ৯০ ভাগ ভরের জন্য দায়ী করা হয় অদৃশ্য বস্তুকে যদিও এদের অস্তিত্ব এবং গঠন সম্পর্কে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ছায়াপথের অভ্যন্তরে অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আন্তঃছায়াপথীয় স্থান হালকা প্লাসমা দ্বারা পূর্ণ। আমাদেরপর্যবেক্ষণিক সীমার মধ্যে একশ বিলিয়নেরও বেশী ছায়াপথ রয়েছে।

এই গ্যালাক্সিটির প্রায় ১৩,৬০,০০,০০,০০০ বৎসর জন্মলাভ করেছিল। এর কেন্দ্রে রয়েছে ধনু এ (Sagittarius A) নামক একটি কৃষ্ণগহ্বর। এই কেন্দ্র থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ২৬, ০০০ আলোকবর্ষ। এর নিকটবর্তী গ্যালাক্সি হলো- মৃগব্যাধ বামন গ্যালাক্সি (Canis Major Dwarf, ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কার হয়েছে)। এর কেন্দ্র থেকে ছায়াপথের দূরত্ব প্রায় ৪২,০০০ আলোকবর্ষ। আর আমাদের সৌরজগত থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সিকে ছায়াপথের একটি দূরবর্তী অংশ হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।

ছায়াপথের নিকটবর্তী অপর গ্যালাক্সি হলো এ্যান্ড্রোমিডা (
Andromeda Galaxy (M31)। এই গ্যালাক্সিটিও ছায়াপথের সাথে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ। এই কারণে উভয় গ্যালাক্সি একটি স্থানীয় দল (Local Group) অংশ। উল্লেখ্য এই স্থানীয় দলে আছে ছায়াপথ, এ্যান্ড্রোমিডা এবং আরও প্রায় ৩০টি ছোটোবড় গ্যালাক্সি।  পৃথিবী থেকে এ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব প্রায় ২,৫০,০০,০০০ আলোকবর্ষ।
বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে এর উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে গল্প প্রচলিত আছে। এ্যারিস্টোটেল, এ্যানাক্সাগোরাস, ডেমোক্রিটাস প্রমুখ দার্শনিকরা ছায়াপথকে নক্ষত্রের সমাবেশ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। পারশ্যের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবু রায়হান আল বিরুনীর মতে এই গ্যালাক্সিকে মনে করেছিলেন- অসংখ্য্ নীহারিকার সমষ্টি। গ্যালিলিও তাঁর টেলিস্কোপের সাহায্যে এর প্রকৃত অবস্থার খুব কাছাকাছি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।  


* আলোকবর্ষঃ 
আলোকবর্ষ হল এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই পরিমাণ দূরত্ব। লক্ষণীয় যে, এক সেকেন্ডে আলোর বেগ ৩ লক্ষ কি.মি. । 


source: bn.wikipedia.org , onushilon.org

যখন ভয়ের নাম ভূমিকম্প...


প্রকৃতির নিয়মে ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট ভূআলোড়নের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো কোনো অংশ হঠাত্‌ কেপেঁ উঠলে তাকে আমরা বলি ভূমিকম্প৷ এধরনের কম্পন প্রচন্ড,মাঝারি বা মৃদু হতে পারে৷ পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়৷ কিন্তু এর বেশিরভাগই মৃদু ভূমিকম্প বলে সাধারণত আমরা অনুভব করি না৷ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে (seisemic zone) বাংলাদেশ অবস্থিত বলে এদেশে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়৷ ১ঌঌ৭ সালের ২১শে নভেম্বর চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রচন্ড এক ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এছাড়া ১ঌঌঌ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববতী এলাকায় ৪ দফা ভূমিকম্প হয়৷ এসব ভূমিকম্পের ফলে বেশ কিছু মানুষ মারা যায় এবং অনেক বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়৷


ভূমিকম্প কেন হয়


ভূবিজ্ঞানীগণ ভূমিকম্পের বিভিন্ন কারণ বা উত্‌স চিহ্নিত করেছেন ৷ তারমধ্যে প্রধান হচ্ছে:
ক) হঠাত্‌ আন্দোলন বা টেকোনিক ভূমিকম্প
খ) আগ্নেয়গিরির কারণে ভূমিকম্প
গ) মানুষ সৃষ্ট ভূমিকম্প 
ঘ) শিলাপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্প 
ঙ) শৈলৎক্ষেপের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্প 


ভূমিকম্প পরিমাপ

যে স্থান বা জায়গায় ভূমিকম্পের উত্‌পত্তি হয় তাকে এর কেন্দ্র বলে এবং কেন্দ্র থেকে তা ঢেউ বা তরঙ্গের মতো চারদিকে প্রসারিত হয়৷ এধরনের তরঙ্গ সিসমোগ্রাফ (Seismograph) বা ভূকম্পন লিখনযন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়৷ সাধারণত অনেক ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি না৷ ভূকম্পন যখন মাত্রাধিক হয় এবং ঘরবাড়ি, দালানকোঠা,গাছপালা ইত্যাদি যখন নড়তে থাকে তখন আমরা অনুভব করি৷
ভূমিকম্পের মাত্রা দু'ভাবে পরিমাপ করা হয়-
  • তীব্রতা (Magnitude}


  • প্রচন্ডতা বা ব্যাপকতা (Intensity)








ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো

বাংলাদেশে ভূমিকম্প সবসময় না হলেও এর আশংন্কা রয়েছে৷ গত কয়েকবছরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রচন্ডতা ও ব্যাপকতা লক্ষ্যণীয়৷ যেমন,

২০০১ সাল : ঐ বছর ২৬শে জানুয়ারি গুজরাটের ভয়াবহ ভুমিকম্পে প্রায় ২০ হাজার লোক নিহত হয়৷ রিখ্টার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.ঌ৷ এই ভূমিকম্পের কারণে শুধু ভারত নয় পাকিস্তানেরও বেশকিছু অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৷ এমনকি ঐ ভূমিকম্প বাংলাদেশের বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকাতেও মৃদুভাবে অনুভূত হয়৷

১ঌঌঌ সাল : জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ৪ দফা ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷

১ঌঌ৭ সাল : ২১শে নভেম্বর ১ঌঌ৭ চট্টগ্রাম ও তত্‌সংলগ্ন এলাকায় এক প্রচন্ড ভূমিকম্পে আঘাত হানে সেসময় একটি পাঁচতলা ভবন মাটির নিচে ডেবে যায় ৷

১৮ঌ৭ সাল : প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এ দেশের পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল তা ভুলবার মতো নয়৷ এমন কি কোনো কোনো ভূমিকম্পে নদ-নদীর গতিপথ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে৷
এছাড়া ভূমিকম্পের কারণে গত কয়েক বছরে তাইওয়ান, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে৷ কোনো কোনো জায়গায় বার বার ভুমিকম্পের ঘটনাও ঘটেছে৷ যেমন তাইওয়ানে একবার প্রচন্ড ভুমিকম্প হওয়ার পরই আবার ভূমিকম্প হয়েছে৷  


ভূমিকম্পের কিছু ফলাফল



                              









source: www.jeeon.com

এই দ্বীপটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিস্ময়!






এই দ্বীপটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিস্ময়!




















একটি ছোট্ট দ্বীপ যার নাম হয়তো খুব কম মানুষই জানেন কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে এই দ্বীপের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণটা জানলে বিস্মিত না হয়ে পারবেন না। প্রকৃতি সত্যিই যেন এক জাদুকর।

ফিলিপাইনসের লুজোন দ্বীপের নাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষজন এবং বিশেষ বিশেষ শাখা ছাড়া পৃথিবার অন্যান্য প্রান্তের মানুষ খুব একটা জানেন না। কিন্তু জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশবিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি ‘মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড’। পৃথিবীর যাবতীয় স্তন্যপায়ী প্রজাতির সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতি এই দ্বীপেই পাওয়া যায়।

পৃথিবীতে মোটামুটি ভাবে ৫৬টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে যারা উড়তে পারে না। এদের মধ্যে ৫২ ধরনের প্রজাতি একমাত্র এই দ্বীপেই রয়েছে, পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর স্কট স্তেপ্পান জানাচ্ছেন, এই দ্বীপটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বসবাসের ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

গত ১৫ বছর ধরে এই দ্বীপটিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানীরা এবং এখানে গবেষণা করতে করতেই তাঁরা আবিষ্কার করেছেন অন্তত ২৮টি নতুন ধরনের প্রজাতি। এই নতুন প্রজাতিগুলি এবং সামগ্রিকভাবে দ্বীপে বসবাসকারী সমস্ত ধরনের স্তন্যপায়ীদের একটি ক্যাটালগও তৈরি করছেন তাঁরা।

এখনও পর্যন্ত যে ২৮টি নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চারটি বিশেষ ধরনের ট্রি-মাইস বা গেছো ইঁদুর। গবেষক স্তেপ্পানের বক্তব্য, নতুন প্রজাতি আবিষ্কার হওয়াটা খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয় কিন্তু একটিমাত্র দ্বীপ, যা কিনা ৪০ হাজার বর্গমাইল আয়তনের, সেখানে এই ২৮টি রকম নতুন প্রজাতির স্তন্যপায়ী থাকাটা জীববিজ্ঞানে একটু বিস্ময়কর বইকি।

আপনি জানেন কি? বহুল জনপ্রিয় পানীয় “কফি” ১৪০০ সালে ইয়েমেনের মুসলমানরা আবিস্কার করেছিলো


বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন পায় ১৬০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়ে থাকে । বিলিয়নের মত মানুষের কাছে কফি পান রীতিমত নিত্যদিনের ব্যাপার । তবে আমরা অনেকেই এই কফি প্রচলনের ইতিহাসটা জানি না ।
ঐতিহাসিক দলিল মোতাবেক , ১৪০০ সালের দিকে ইয়েমেনের মুসলিম সমাজে কফি সর্বপ্রথম জনপ্রিয়তা পায় । কিংবদন্তী অনুসারে , ইয়েমেন কিংবা ইথিওপিয়ার এক মেষপালক হঠাৎ লক্ষ্য করে তার মেষগুলো অজানা এক প্রকার গাছের পাতা খেয়ে সতেজ হয়ে উঠছে । এটা দেখে নিজের উপর ব্যাপারটা পরীক্ষা করার ইচ্ছা জাগে তার । মেষপালক সেই পাতা খায় এবং লক্ষ্য করে এর ফলে তার ক্লান্তি দূর হয়ে সতেজ ভাব লাগছে । এ ঘটনার পর থেকে কফির দানা গরম পানিতে দিয়ে পান করার ব্যপারটা ইয়েমেনে প্রচলিত হয়ে পরে । আর এভাবেই উদ্ভব হয় বর্তমান পৃথিবীর খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়, কফি ।

এ ব্যাপারটা নিশ্চিত যে কফির প্রচলন হয় ইয়েমেন থেকেই এবং ইয়েমেন হয়ে কফি সমগ্র উসমানী খিলাফতে (অটোমান খিলাফত) ছড়িয়ে পরে । এর পর সমগ্র মুসলিম এলাকার গুরুত্বপূর্ন শহরগুলো, যেমন- ইস্তাম্বুল, বাগদাদ, কায়রো, দামাস্কাসে কফিহাউস তৈরি করা হয় । এরপর মুসলিম সভ্যতা থেকে কফি ইতালীর ভেনিস হয়ে ইউরোপে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান





জ্যোতির্বিজ্ঞান হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ (Astronomical/ Celestial Objects), যেমন- গ্রহ (Planets), নক্ষত্র (Stars), ধূমকেতু (Comets), নীহারিকা (Nebula), নক্ষত্রপুঞ্জ (Star Clusters), ছায়াপথ (Galaxy), প্রভৃতি এবং বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা (Astronomical Phenomenon) সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

অন্যদিকে জ্যোতিষশাস্ত্র হলো কিছু পদ্ধতি, প্রথা এবং বিশ্বাসের সমষ্টি যাতে মহাকাশে জ্যোতিষ্কসমূহের আপেকি অবস্থান এবং তৎসংশ্লিষ্ট তথ্যাদির মাধ্যমে মানব জীবন, মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং মানবীয় ও বহির্জাগতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় প্রাচীনকালের বিজ্ঞানীদের মাঝে এই দুই শাস্ত্রের সমান্তরাল চর্চা দেখতে পাওয়া যায়। তবে বিজ্ঞানের অনগ্রসরতা, গোঁড়ামি এবং সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবিমুখিতা গ্রহ-নত্রের পাঠকে ঠিক মতো বৈজ্ঞানিক ধারায় চালিত হওয়ার সুযোগ দেয়নি। মুসলমানদের মাঝেও এই দুই শাস্ত্রের চর্চা প্রথম শুরু হয়। উনারা এই চর্চাকে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের পর্যায়েই উন্নীত করেননি, বরং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তত্ত্ব ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে একে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, যা এক কথায় অভূতপূর্ব। কেমন করে এটি সম্ভব হলো, তা নিয়ে আলোচনা থাকছে এখন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানদের আবিষ্কার এবং অর্জন এত ব্যাপক এবং এত বেশি সময় ধরে বিস্তৃত যে, স্বল্প পরিসরে তার বর্ণনা দিতে গেলে অনেক তথ্যই হয়তো বাদ পড়ে যাবে। তারপরেও স্থানাভাবে এখানে কেবলমাত্র একেবারেই বর্ণনা না করলেই নয়, এমন আবিষ্কার নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে। সন্দেহ নেই, পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মতো আরবেও জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা সুপ্রাচীনকাল হতেই চলে আসছিল। এছাড়া, পেশাগত জীবনে ব্যবসায়ী এমন আরববাসীর সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল না। ফলে, স্থল ও জলপথে বাণিজ্য পরিচালনাকালে আকাশের তারকা দেখে পথনির্দেশনা লাভের বিদ্যা নিশ্চয়ই কিছু পরিমাণে ছিল না? কিন্তু, এই জ্ঞান ও এর চর্চা দিয়ে আর যাই হোক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব ছিল। প্রথম যাত্রা শুরু হয়, অত্যন্ত স্বল্প সময়ে একটি বিশাল ভূখণ্ড (প্রায় ১৩,০০০,০০০ বর্গকিলোমিটার) মুসলমানদের অধিকারে এসে যাওয়ার পর। এই বিশাল অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত মুসলমানদের ইসলামী সব বিষয়ই সরাসরি চন্দ্র-সূর্য এবং দিকের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এ সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই জ্যোতির্বিদ্যার বৈজ্ঞানিক চর্চার সূত্রপাত এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রায় সকল মুসলমান বিজ্ঞানী আর যে েেত্রই অবদান রাখুন না কেন, চেষ্টা করেছেন এ বিষয়ে অবদান রাখতে। উনারা একের পর এক অনুবাদ করেছেন, গবেষণা চালিয়েছেন, জিজ্ (তল) লিখেছেন। উল্লেখ্য যে, জ্যোতির্বিদ্যার উপর মুসলমানদের লিখিত বইগুলো জিজ্ নামেই বেশি পরিচিত।

স্পষ্টতইঃ নানান অঞ্চলের নানান ভাষার জ্যোতির্বিদ্যার গ্রন্থের আরবী অনুবাদ দিয়ে শুরু পথ চলা। এেেত্র প্রথমেই যে নামটি আসে, তা হচ্ছে ইয়াকুব ইবনে তারিক। তিনি এবং আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম আল-ফাজারী মিলিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করে আজ জিজ্ আল-মাহ্লুল মিন আস্-সিনহিন্দ্ লি-দারাজাত্ দারাজারচনা করেন। অবশ্য, কাজের শুরুটা করেন পূর্বোক্ত মুহাম্মাদ আল ফাজারীরই পিতা ইব্রাহীম আল ফাজারী। এর সাথে সাথে গ্রীক আল-ম্যাজেস্ট’(ল্যাটিন- Almagest; আরবী, al-kitabul-mijisti) এবং এলিমেন্টস্ (Elements)সহ অন্যান্য গ্রন্থ একের পর এক আরবীতে অনূদিত হতে থাকায় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ঘুমিয়ে থাকা জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞানভাণ্ডার একসাথে যেন মুসলমানদের সামনে খুলে যায়। এর পরেই এেেত্র আবির্ভূত হন বিজ্ঞানের জগতের সর্বকালের এক মহান দিকস্রষ্টা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজ্মি, গণিতে যাঁর অবদানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানেও এই গণিতবিদের মৌলিক আবিষ্কার রয়েছে। উনার রচিত জিজ্ আল-সিন্দ্হিন্দ্’ (তল Al-Sindhind- Astronomical tables of Sind and Hind) এেেত্র এক অনন্যসাধারণ গ্রন্থ যাতে তিনি প্রায় ৩৭টি অধ্যায় এবং ১১৬টি ছক সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করেছেন। উনার রচনায় ভারতীয় উৎস হতে অবাধে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং ব্যবহার করেছেন। চন্দ্র, সূর্য ও সে আমলে জানা পাঁচটি গ্রহের গতিবিধি, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ, ঋতু পরিবর্তন নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। একই সময়ে আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ হাবাশ আল-হাসিব আল মারওয়াজি উনার The Book of Bodies and Distances গ্রন্থে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্যের পরিধি, ব্যাস ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হিসেব করেন। আবু আল-আব্বাস আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর আল-ফারগানী হচ্ছেন সেসময়ের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ। তিনি ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে আল-ম্যাজেস্টের সংপ্তি ভাষ্য লিখেন যা দ্বাদশ শতকে Elements of astronomy on the celestial motions শিরোনামে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। সমসাময়িককালে আরো যাঁরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তাঁদের মধ্যে সাবিত ইবন্ েক্বরাহ্, জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আবু মাশার আল-বল্খী এবং বনু মুসা ভ্রাতৃত্রয়ের অগ্রজ আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন্ েমুসা আল-শাকির নাম নিতেই হয়।

এতণ পর্যন্ত যে সব তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা প্রধানত টীকা-ভাষ্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, এর পরে যা হলো তা এক কথায় অভূতপূর্ব। সময়ের অতি স্বল্প পরিসরে মুসলমানদের মাঝে জ্যোতির্বিজ্ঞানে মৌলিক অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা এত বেশি যে, মাঝে মাঝে রূপকথা কিংবা অতিকথন মনে হয় অনেকের!

এেেত্র প্রথমেই যিনি আসেন তিনি আবু আব্দুল্লাহ, মুহাম্মাদ ইবনে জাবির ইবনে সিনান আল-বাত্তানী। মুসলমানদের বিজ্ঞানের ইতিহাসে উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদও বলেন কেউ কেউ। কোন প্রকার টেলিস্কোপের সাহায্য ছাড়াই কেবল খালি চোখের পর্যবেণ এবং গণিতের প্রয়োগে তিনি সে সময়েই এক সৌর বছরের (One Solar Year) মান হিসেব করেন, যার সাথে আজকের দিনের আধুনিকতম হিসেবের (৩৬৫দিন ৫ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ড) সাথে মাত্র তিন মিনিটের গরমিল পাওয়া গিয়েছে। তিনিই আপন অে পৃথিবীর ঝুঁকে থাকার পরিমাণ হিসেব করেন, যা আধুনিক হিসেবের সাথে মাত্র অর্ধডিগ্রি বেশি! ৫৭টি অধ্যায় সম্বলিত উনার আল-জিজ্ আল-সাবীএকটি অসাধারণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সংকলন যা ষোড়শশতকে De Motu Stellarum নামে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং পাশ্চাত্য জ্যোতির্বিদ্যার উত্তরণে সরাসরি অবদান রাখে। তারপরেও, তিনি সেই তিনি দুর্ভাগা বিজ্ঞানীত্রয়ের একজন কোপার্নিকাসের সৌর মডেলে যাঁদের অবদানকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপো করা হয়েছে।

মুসলিম দর্শনের অন্যতম পুরোধা আবু নার্স আল-ফারাবী জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকেও হাত বাড়িয়েছিলেন। তবে, গ্রীকবিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত উনার দার্শনিক পরিচয়ের নিচে সে সব অবদান খুব বেশি মাথা তুলতে পারে নি। আবদুর রহমান আল-সুফী সে সময়ের আরেক প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ। Book of Fixed Stars উনার অমর গ্রন্থ। আমাদের আকাশগঙ্গা (Milky Way) ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda) আবিষ্কারের কৃতিত্ব অনেকে উনাকেই দিয়ে করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র অ্যাস্ট্রোল্যাবের (Astrolabe) অন্ততঃ ১০০০টি ভিন্নধর্মী ব্যবহার তিনি বর্ণনা করেন। আবু মাহমুদ খুজান্দী নিজের মতো করে পৃথিবীর ঝুঁকে থাকার পরিমাণ (Axial Tilt) হিসেব করেন যা ফারাবীর কাছাকাছিই আসে। উনার বিস্তৃত কাজের বিবরণ পাওয়া যায় পরবর্তী সময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ নাসিরউদ্দীন তুসীর লেখায়। তবে, ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে উনার যে আবিষ্কারটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়, তা হচ্ছে সেক্সট্যান্ট (Sextant) যন্ত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানে আবদুর রহমান ইবন্ েআহ্মদ ইবন্ েইউনুস আরেকটি অবিস্মরণীয় নাম। উনার আল-জিজ্ আল-কবির আল-হাকিমীএকটি মৌলিক গ্রন্থ যার অর্ধেকই বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে বা চুরি হয়ে গেছে। এ গ্রন্থে তিনি ৪০টি গ্রহ সমাপতন (Planetary Conjunction) এবং ৩০টি চন্দ্রগ্রহণ (Lunar Eclipse) সম্পর্কিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

খ্রিস্টীয় একাদশ শতক মুসলমানদের বিজ্ঞানের জগতে এক রতœগর্ভা শতাব্দী। ইবনেুল হাইছাম, আল-বিরুনী এবং ইবনে সীনার মতো তিন তিনজন শাহানশাহী বিজ্ঞানীর আবির্ভাবে ধন্য এ শতক। আলোকবিজ্ঞানে অসামান্য সংযোজন কিতাবুল মানাজির’-এর ১৫-১৬ অধ্যায়ে ইবনুল হাইছাম (৯৬৫-১০৩৯) জ্যোতির্বিদ্যার আলোচনা রেখেছেন। এছাড়া উনার মিযান আল-হিক্মাহ্ (Balance of Wisdom) এবং মাক্বাল ফি দ্য আল-ক্বামার (On the Light of the Moon) গ্রন্থদ্বয়ে তিনি সর্বপ্রথম গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা চালান।

আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবন্ েআহ্মাদ আল-বিরুনী (৯৭৩-১০৪৮) অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান রাখতেও ভোলেননি। সকল বস্তুই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়’- এ বাক্যের মাধ্যমে তিনি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির (Gravity) ধারণা দেন (কিন্তু পরে এেেত্র এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব পায় হিংসাবশত: বিজ্ঞানী নিউটন)। তিনি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের উপর কানুন মাস্উদীনামে একটি বিশাল গ্রন্থ রচনা করেন, যার চতুর্থ খণ্ডটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনায় পূর্ণ। এতে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ত্রিকোণমিতিকে তিনি একই সঙ্গে ব্যবহার করে উভয়েরই উন্নতি সাধন করেন। দ্রাঘিমা, অরেখা, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, দিক নির্ণয় ও গ্রহ-নত্রের অবস্থানজ্ঞাপক সংজ্ঞা নির্ণয়ে এ খণ্ডের অধিকাংশ পৃষ্ঠা ব্যয় হয়েছে। স্থানাংক নির্ণয়ে আংশ (Latitude) এবং দ্রাঘিমাংশের (Longtitude) ব্যবহারের শুরুটা উনার হাত দিয়েই হয়। তিনি সে যুগেই প্রায় নিখুঁতভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করেন যা আজকের দিনের পরিমাপের চেয়ে মাত্র ৩২ কিলোমিটার কম। অ্যারিস্টটলের পৃথিবীকেন্দ্রিক (Geo-centric) বিশ্ব ধারণার তিনি একজন কড়া সমালোচক তথা ভুল প্রমাণ করেন। এভাবে আল-বিরুনীর হাত দিয়েই সুস্পষ্টভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের পথ আলাদা হয়ে যায়। অবশ্য, আল-বিরুনী এখানেই থেমে যাননি, বরং চান্দ্র-সৌর দিনলিপি (Lunisolar Calendar), তারকাদের অবস্থানমাপক যন্ত্র (Planisphere) এবং প্রাথমিক গতিমাপক যন্ত্র (Odometer) উনার হাতেই আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া তিনি অ্যাস্ট্রোল্যাব এবং সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের উন্নতিসাধন করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অমর সাধক ইবন্ েসীনা (৯৮০-১০৩৭) শুক্র (Venus) গ্রহের উপর প্রচুর কাজ করেছেন। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে কাছে- এটি উনার আবিষ্কার। তিনিও জ্যোতির্বিদ্যাকে জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে আলাদা করে দেখতেন। তিনিও আল-ম্যাজেস্টের একটি ভাষ্য রচনা করেন। গ্রহসমূহের আবর্তনকালে টলেমী প্রস্তাবিত মডেলে যে সমস্যাটি অ্যাকোয়েন্ট সমস্যা (equant problem) নামে পরিচিত, ইবনে সীনা তার একটি সমাধান বের করেন বলে জানা যায়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানরা কতদূর আবিষ্কার রেখেছেন তা উপরের লেখা থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায়। কিন্তু, এগুলো পুরো অবদানের প্রথম অংশ মাত্র! ইবনে সীনার পরে আরো চার শতক ধরে এেেত্র মুসলমানরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে ছিলেন।

Monday, February 13, 2017

নাইট্রিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ বলয় পরীক্ষা



একটি টেস্ট-টিউবে নাইট্রিক অ্যাসিড কিংবা নাইট্রেট লবণের জলীয় দ্রবণ নিয়ে ওর সঙ্গে সদ্যপ্রস্তুত FeSO4 দ্রবণ যোগ করা হল । এইবার টেস্ট-টিউবের গা-বেয়ে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] ধীরে ধীরে দ্রবণের সঙ্গে যোগ করা হল গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] ভারী বলে তলায় চলে যায় এবং নীচের স্তর গঠন করে । এর ওপরে দ্রবণের স্তর থাকে । এই দুই তরলের সংযোগস্থলে একটা বাদামী বলয় গঠিত হয় । এই পরীক্ষাকে বলয় পরীক্ষা [Ring Test] বলা হয় । নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] এবং নাইট্রেট লবণের শনাক্তকরণে এই পরীক্ষা করা হয় ।



বিক্রিয়া: গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4] মেশালে FeSO4 দ্রবণের সঙ্গে HNO3 -এর বিক্রিয়ায় NO উত্পন্ন হয় । উত্পন্ন NO অবিকৃত FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রোসোফেরাস সালফেট Fe(NO)SO4 উত্পন্ন করে । এর রং বাদামীএটি হল বাদামী বলয় ।
6FeSO4 + 3H2SO4 + 2HNO3 = 3Fe2(SO4)3 + 2NO + 4H2O
বর্তমান মতে উত্পন্ন NO, অবশিষ্ট FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাদামী বর্ণের [FeNO(H2O)5]SO4 যৌগ উত্পন্ন করে । FeSO4 + 6H2O = [Fe(H2O)6]SO4
[Fe(H2O)6]SO4 + NO = [Fe(NO)(H2O)5]SO4 + H2O



নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন আছে প্রমাণ :-
[i]
একটি ফ্লাস্কে ঝামা পাথর রেখে লোহিত-তপ্ত করে ওর ওপর ফোঁটা ফোঁটা গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ফেলা হল । উত্পন্ন গ্যাসকে প্রথমে বরফে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে, পরে হিমমিশ্রে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে চালনা করা হল । এর ফলে শেষ U-টিউবের নির্গম-নল দিয়ে একটি বর্ণহীন গ্যাস নির্গত হতে দেখা যায় । এর মধ্যে শিখাহীন জ্বলন্ত পাটকাঠি ধরলে তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে এবং ওই গ্যাস ক্ষারীয় পাইরোগ্যালেট দ্রবণে শোষিত হয় । সুতরাং, গ্যাসটি O2 এই অক্সিজেন [O2] নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] থেকে আসে ।
[ii]
বরফে রাখা U-টিউবের মধ্যে বর্ণহীন তরল জমা হয় যা অনার্দ্র CuSO4 -কে নীল করে । সুতরাং, বর্ণহীন তরলটি হল জল । জলে H2 আছে, এই H2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে ।
4HNO3 = 2H2O + 4NO2 + O2 ↑
[iii]
উত্তপ্ত কপারের ওপর দিয়ে নাইট্রিক অ্যাসিড বাষ্প চালনা করলে বর্ণহীন, গন্ধহীন একটি গ্যাস উত্পন্ন হয় ওই গ্যাস জ্বলন্ত পাটকাঠিকে নিভিয়ে দেয় । ওই গ্যাসের মধ্যে জ্বলন্ত Mg জ্বলতে থাকে এবং বিক্রিয়া করে একটি সাদা পদার্থ উত্পন্ন করে যা ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া উত্পন্ন করে । সুতরাং সাদা যৌগটি নাইট্রাইড যৌগ যা N2 -এর সঙ্গে Mg -এর বিক্রিয়ায় উত্পন্ন হয় । তাই, বর্ণহীন গ্যাসটি নাইট্রোজেন । এই N2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে ।
5Cu + 2HNO3 = 5CuO + N2 ↑ + H2O
3Mg + N2 = Mg3N2, Mg3N2 + 6H2O = 3Mg(OH)2 + 2NH3
নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার :-
[i]
রসায়নগারে বিকারক হিসাবে যেমনঅ্যাসিডরূপে, জারক পদার্থরূপে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[ii]
বিস্ফোরক পদার্থ যেমননাইট্রো গ্লিসারিন যা ডিনামাইট তৈরিতে কাজে লাগে, ট্রাই-নাইট্রোটলুইন, পিকরিক অ্যাসিড প্রস্তুতিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।
[iii]
সার উত্পাদনে এবং নাইট্রেট লবণ তৈরিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।
[iv]
সেলুলয়েড, ওষুধ, সুগন্ধী নাইলন, প্লাস্টিক, রেয়ন, কৃত্রিম রং, কৃত্রিম সিল্ক তৈরিতে HNO3 ব্যবহৃত হয় ।
[v]
অম্লরাজ [Aqua regia] প্রস্তুতিতে এবং বিভিন্ন ধাতু ও ধাতু সংকর দ্রবীভূত করতে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[vi]
ইলেকট্রোপ্লেটিং ও তড়িৎকোশে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয় ।
[vii]
তামা ও পিতলের ওপর দাগ কেটে নক্সা করতে, রকেটের জ্বালানির জারক পদার্থ হিসাবে নাইট্রিক অ্যাসিড [HNO3] ব্যবহৃত হয়
 

Blogger news

Blogroll

About