দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে নিরিবিলি ছদ্মবেশ নিয়ে শুয়ে আছে তারা। শিকার ধারে কাছে আসা মাত্রই বিদ্যুৎবেগে হামলা পরার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে আছে সে। আমরা মরুভূমিতে অবস্থারত কোনো ব্রিটিশ ডেজার্ট সোলজারের কথা বলছি না অবশ্যই। আমরা আজ বলছি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত এবং ভয়ংকর র্যাটল স্নেকের কথা। লেজে ঝুনঝুন শব্দ তুলে মুহূর্তের মধ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এই সাপ। শিকারের জন্য অপেক্ষা করার সময়ের জন্যও এই সাপ বিখ্যাত। এমনও দেখা গেছে, র্যাটল স্নেক কোনো খাবার ছাড়াই টানা দুবছরও অপেক্ষা করে ছিল পরবর্তী শিকারের অপেক্ষায়।
অন্যান্য সাপের মতোই এরা শরীরের সকল শক্তি একত্রিত করে
শিকারকে হামলা করে। চলতি বছরে
প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাধারণ সাপেরা সচরাচর ছোবল দেয়ার জন্য ৪৪ থেকে ৭০ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত সময় নেয়। মানুষ
তার চোখের পলক
ফেলতে সময় নেয় ২০০
মিলিসেকেন্ড। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মানুষের চোখের পলক ফেলার সময়ের মধ্যে র্যাটল স্নেক মোট চারবার ছোবল মারতে
পারে
নির্বিবাদে। মানুষ যখন
শরীরের কোনো অঙ্গ নাড়ায় তাতেও কিছুটা সময় ব্যয় হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, মানব শরীর কোনো বিপদের আশঙ্কা করলে অনেক দ্রুত কর্মক্ষম হয়ে উঠে এবং দ্রুত গতিতে নড়াচড়া করতে পারে। কিন্তু তারপরেও
র্যাটল স্নেক
মানুষের চিন্তারও আগে
নিদেনপক্ষে শরীরের কয়েক স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
লুসিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড পেনিংয়ের মতে, র্যাটল স্নেক যে শিকারকে লক্ষ্যে পরিণত করে তাকে ছোবল দেবেই। আর এই সাপের
ছোবল থেকে রক্ষা
পাওয়ার কোনো উপায় নেই। পেনিং
দীর্ঘসময় এই সাপেদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। যদিও তিনি যে র্যাটল স্নেকটিকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সেটার কোনো
বিষ ছিল না।
প্রাণীকূলের মধ্যে কোনো
প্রাণী সবচেয়ে বেশি গতিতে আক্রমন করতে পারে এই প্রকল্পের আওতায় র্যাটল স্নেকের উপর গবেষণা করেন তিনি। এখন
পর্যন্ত
বিশ্বের মোট সাড়ে তিন হাজার
সাপের প্রজাতির উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানা যায়।
সন্দেহাতীত ভাবেই র্যাটল স্নেকের দেহতত্ত্ব অন্যান্য সাপের
তুলনায় কিছুটা
পৃথক। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বর্তমান র্যাটল স্নেক কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এই অবস্থায় এসেছে। বিশেষত বিরুপ
পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে
চলার কারণেই এই সাপেদের মাঝে অন্যান্য সাপের তুলনায় পৃথক কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মানুষের শরীরে কমবেশি ৭০০ থেকে ৮০০
মাংশপেশি থাকে।
কিন্তু সাপেদের শরীরে এই
পেশির সংখ্যা দশ হাজার থেকে পনেরো হাজারের মধ্যে। আর এই অধিক মাংসপেশির কারণেই শরীরকে মুহূর্তে কুণ্ডলী
পাকিয়ে মুর্হূমুহ
আক্রমণে পারদর্শী সাপ।
মজার বিষয় হলো, বিজ্ঞান আজ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও সাপের শরীরের এই বিপুল সংখ্যক পেশি কিভাবে কাজ করে তা এখনও বের করতে পারেনি
বিজ্ঞানীরা। কেউ
বিশ্বাস করেন যে, সাপেদের সকল পেশিই একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সম্মিলিত শক্তির কারণেই সাপ ফনা তুলে আক্রমণ করে, অনেকটা রাবার ব্যান্ডের মতো। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সাপকে এত কম সময়ের মধ্যে আক্রমণ করতে হয় যে, গোটা শরীর থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে যে সময় লাগে তার তুলনায় কম
সময়ের মধ্যেই
ছোবল দেয় সাপ।
পেনিংয়ের মতে, ‘আমরা চ্যামিলন এবং কিছু সালামান্ডার্সদের দেখেছি যারা শিকার করার জন্য তাদের জিভকে ব্যবহার করে। শিকারের উদ্দেশ্যে তারা
তাদের জিহভা
নিক্ষেপ করে এবং মুহূর্তের
মধ্যেই শিকারকে নিজেদের দিকে টেনে নেয়। অনেক সাপের তুলনায় তারা আরও গতির সঙ্গে এই কাজটি করে। কিন্তু পার্থক্য
হলো,
এই কাজে তারা মস্তিস্ক কিছু নড়ছে না, নড়ছে স্রেফ তাদের জিহভাটুকু। মস্তিস্ক খুবই স্পর্শকাতর উপাদান এবং এর প্রভাবও রয়েছে।’
0 comments:
Post a Comment