Pages

Friday, August 10, 2018

বিজ্ঞান-ই মুসলমানদের অবদান



বর্তমান বিশ্বে মুসলমানগণ খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তাঁরা মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এসব বিষয়ে অমুসলিমদেরই নাকি অবদান। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার ইতিহাসটা কি? এটা মুসলমানদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আর এমন কিছু ইতিহাস নিয়েই আজকের এ লেখা। মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।

বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ছিল মুসলমানদের অনেক অবদান। বিশেষত বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের ছিল সবচেয়ে বেশি অবদান। মুসলমান বিজ্ঞানীরা মনে করতেন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এ তিনটি শাখার উপর জ্ঞ্যান অর্জন করা আবশ্যক। এ তিনটি শাখা হচ্ছে প্রথম- মহাকাশ বিজ্ঞান, দ্বিতীয়- গণিত, তৃতীয়- চিকিৎসা বিজ্ঞান।


মহাকাশ বিজ্ঞান প্রয়োজন- চাঁদ এবং সূর্যের হিসাব নিকাশ বুঝতে। যেহেতু চাঁদের হিসাবটা বিশেষ বিশেষ দিন এবং বিশেষ বিশেষ মাস বের করা প্রয়োজন। আর সূর্যের হিসাবটা নামাযের ওয়াক্ত এবং অন্যান্য বিশেষ ওয়াক্ত বের করার জন্য প্রয়োজন।

আর গণিতটা প্রয়োজন- গণিত ছাড়াতো মহাকাশ বিজ্ঞান চিন্তাই করা যায়না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করাও সুন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য হিসাব করতে গণিত লাগে। আবার ফারায়েজের মাসয়ালা অর্থাৎ সম্পত্তি বন্টনের জন্যও গণিত প্রয়োজন। আবার মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নামায শেষ হওয়ার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর।” কোথাও যেতে হলে ম্যাপের দরকার। ম্যাপটা হলো ভূগোলের অংশ আর ভূগোলটা জ্যামিতির অংশ, জ্যামিতিও ওই গণিতের অংশ। ঐ আবার গিয়ে গণিতই লাগে।

আর চিকিৎসা বিজ্ঞানটা প্রয়োজন, কারণ চিকিৎসা করা সুন্নত। সুতরাং এ সুন্নত পালনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করার প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা না করা হয় তাহলে চিকিৎসার সুন্নতটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর একটা সুন্নতকে বিলুপ্ত করার মতো কবীরা গুণাহতো আর কিছু হতে পারেনা। এছাড়াও জান বাঁচানোতো ফরয। সূতরাং সে ফরয আদায়ের জন্যও তো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞান যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু মুসলমানরা মহাকাশ বিজ্ঞানটা শেখার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানটাও চর্চা করতেন। আবার যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে রসায়ন একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত সেহেতু মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানটা শেখার জন্য রসায়নটাও চর্চা করতেন। যার কারণে এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে মুসলমানদের অনেক বেশি অবদান ছিল। এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার ইতিহাস পড়লেই এগুলো জানা যাবে।

আমরা তাহলে দেখতে পারলাম- গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ পাঁচটা শাখার উপর মুসলমানদের খুব বেশি অবদান ছিল।  কি ধরণের অবদান ছিল সে বিষয়েও আমাদের  জানা প্রয়োজন।

প্রথমেই আসি গণিতে-

গণিতে মুসলমানদের অবদানসবচেয়ে বেশি । আর গণিতের শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার।

সংখ্যাতত্ত্ব:

আমরা যে সংখ্যা গুণি, ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯।   এই সংখ্যার যে এক-এর পরে শূণ্য দিলে দশ (১০) হয়; এটাই মুসলমানদের আবিষ্কার। এটা আবিষ্কার করেছেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী। উনিই প্রথম বলেছেন যে, এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ হয়।

এর আগে যেগুলো ছিল ওগুলি অনেক কঠিন ছিল। যেমন- রোমান সংখ্যা। তাদের সংখ্যা ছিল এক, পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ, এক’শ, পাঁচ’শ, এক হাজার, পাঁচ হাজার এরকম সংখ্যা। এগুলোর সাথে যোগ বিয়োগ করে আমি যেটা চাই সেটা বানিয়ে নিতে হতো। আর ইন্ডিয়ান সংখ্যাটা যেরকম ছিল- এক থেকে নয় পর্যন্ত নয়টা সংখ্যা, আবার দশ থেকে নব্বই পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা, আবার একশ থেকে নয়শ পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা। এরকম অনেক সংখ্যা। তো ইন্ডিয়ান সংখ্যা কিছুটা সোজা হলেও সংখ্যা এতো বেশি যে সংখ্যা মনে রাখতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মূসা আল খারিজমী উনি সুন্দর একটা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন যে, একের পর শূন্য দিলেই দশ হয়ে যায়। দশ সংখ্যাই অংক শেষ।

বীজ গণিত:

এটাও মূসা আল খারিজমী উনারই আবিষ্কার। উনাকে অবশ্য মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গণিতবীদ হিসেবে ধরা হয়। এই আধুনিক বীজ গণিত যেটা, এটা উনিই আবিস্কার করে দিয়ে গেছেন। এর আগে যে বীজ গণিত ছিল সেগুলো এতো জটিল যে, আসলে বুঝাটা খুবই কঠিন। উনি যেটা আবিস্কার করে দিয়েছেন এটা খুবই সোজা এবং এখন পর্যন্ত এটাই চলে আসতেছে। বীজ গণিত ইংরেজী হচ্ছে Algebra (এ্যালজেবরা)। মূসা ইবনে খারিজমী যে বইটা লিখেছিলেন সেটা হচ্ছে, ‘কিতাবুল জাবির ওয়াল মুকারাবা’। ঐ আল জাবিরটাকেই (الجبر, al-ğabr) পরে তারা বানিয়ে ফেলছে এ্যালজাবরা(algebra)

আর বীজগণিতের উপর যত অবদান সবই মুসলমানদের। যেমন বীজ গণিতের মধ্যে ‘পাওয়ার’এর যে সিস্টেমটা; এটাও মুসলমানদেরই আবিস্কার। আবু কামিল নামে একজন মুসলমান গণিতবিদ ছিলেন উনি এটা প্রথম চালু করেন। পাওয়ার, রুট এগুলোর সিস্টেম। তারপরে অংকের যে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এই চিহ্ণগুলিও মুসলমানদেরই দেয়া। এই চিহ্ণগুলি আবিস্কার করেছিলেন, আবুল হাসান ইবনে আলী কালাসাদি।

মুসলিম মনীষা গ্রন্থের মতে, মুহম্মদ মুসা আল খারিজমির বীজগণিত প্রাঞ্জল ও সরল ভঙ্গিতে লেখা, তাতে প্রায় ৮০০ ধরনের উদাহরণ দেয়া আছে। তিনি একত্রীকরণ ও দুই ডিগ্রির সমীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করে তার হরণ ও পূরক সম্পর্কেও বর্ণনা দিয়েছেন। সমীকরণকে সমাধান করার প্রায় ছয়টি নিয়ম তিনি আবিষ্কার করেন।

আমরা অংকের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোন অজানা মানকে X অথবা Y হিসেবে ধরে নিয়ে তার সমাধান বের করি। এই পদ্ধতিটাও আল খারিজমির আবিস্কার দেয়া।

আমরা সাধারণত কোন সমীকরণ সমাধান করে যখন X অথবা Y-এর একটি করে মান পাই। যেগুলো এক ঘাত সমীকরণ নামে পরিচিত। আবার দ্বিঘাত সমীকরণে দুটি মান পাওয়া যায়। এই দুই ধরণের সমীকরণের বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখা তুলে ধরেন আলখারিজমি।
যেমন X+1=0, এটি একটি একঘাত সমীকরণ যার একটি মান 1। আবার X2-5X+6=0 একটি দ্বিঘাত সমীকরণ যেখানে এর মান দুটি 3 অথবা 2.
তাঁর এলজাবরা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে গণিত জগতে এর উপযোগীতা অভাবনীয় বেড়ে যায়। মধ্যযুগের আর কোন গণিতবিদই গণিত জগতে তার সমান্তরাল কর্ম উপস্থাপন করে যেতে পারেননি। তিনি গণিতের লগারিদম শাখাটিও তিনি উন্নয়ন করেন।

আল-জাবির ওয়াল-মুকাবিলা:

বীজগণিতের উপর লেখা তাঁর এ বইটি সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। এই বইটির নাম অনুসারে এলজেবরা বা বীজগণিত নামকরণ করা হয়। এ বইটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় দ্বাদশ শতকে। অনুবাদ কর্মের মধ্য দিয়ে এই নতুন বিজ্ঞান পশ্চিমা জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়। এর আগে ইউরোপের কাছে বীজগণিত ছিলো একটি অচেনা বিষয়। ইউরোপীয়রা এ বিষয়ে ছিলো পুরোপুরি অজ্ঞ।

ছবি: আল খারিজমির ‘কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’ কিতাবের একটি পৃষ্ঠা
ছবি: আল খারিজমির ‘কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’ কিতাবের একটি পৃষ্ঠা
এক নজরে `কিতাব আল জাবির ওয়াল মুকাবালা’:
বইটি পাঁচখন্ডে বিভক্ত।
প্রথম অংশে তিনি দ্বিঘাত সমীকরণগুলোকে ছয়ভাগে বিভক্ত করে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আলোচনা করেন। দ্বিঘাত সমীকরণে যে দুটো মূল বিষয় খারেজমী সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন। এবং এটি সমাধান করেন।
দ্বিতীয় অংশে তিনি বীজগণিতের সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করেন।
চতুর্থ খন্ডে তিনি করণী অপসারণ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।
দশম শতাব্দীর ইউসূফ রচিত ‘মাফাতিহুল উলুম’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।

দ্বিঘাত সমীকরণ:

এটাও আবিস্কার করেছেন মুসলমানরা। তারপরে দ্বিপদী উপপাদ্য; এটাও প্রথম দেন মুসলমানরা। আবু বক্বর ইবনে হুসাইন আল কারাজি প্রথম এই দ্বিপদী উপপাদ্যটা দেন। পরবর্তীতে ওমর খাইয়াম আবার এই দ্বিপদী উপপাদ্যটার উপর আরো কাজ করেন এবং উনি এই দ্বিপদী উপপাদ্যের মাধ্যমেই যেকোন সংখ্যার যেকোন তম রুট বের করার একটা পদ্ধতি বের করেন। পরবর্তীতে পদ্ধতিটা হারিয়ে যায় তবে উনি যে এই পদ্ধতিটা বের করেছিলেন এটা অন্যান্য মুসলমান বিজ্ঞানীদের বইয়ে এই পদ্ধতিটা পাওয়া যায়।

ত্রিকোণমীতি:

এটার উপরেও মুসলমানদের অনেক অবদান। রোমানরা ত্রিকোণমীতি প্রথম আবিস্কার করে কিন্তু রোমানরা ত্রিকোণমীতির যে ব্যাখ্যা দিত, সে ব্যাখ্যা শুনে মানুষ ত্রিকোণমীতি বিমুখ ছিল। পরবর্তীতে মুসলমান একজন গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে জাবির আল হারানী ওয়াল বাত্তানী তিনি প্রথম ত্রিকোণমীতি সম্পর্কে সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। যারফলে আবার সবাই ত্রিকোণমীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। উনি অনেকগুলো ত্রিকোণমীতির ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন একটা ফর্মুলা আছে ten=sin/cos আবার ten এর টেবিলটাও মুসলমানদের আবিস্কার করা। এটা আবিস্কার করেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী।

তারপরে এ্যালগরিদম তৈরী করার পদ্ধতিটাও মুসলমানদেরই করা। আবু জাফর মুহম্মদ মূসা ইবনে আল খারিজমী প্রথম এটা আবিস্কার করেন। এই এ্যালগরিদমের ফর্মুলাটা প্রয়োগ করেই কম্পিউটারের ক্যালকুলেশনের লজিকটা তৈরী করা হয়। এক কথায় আসলে বর্তমানে কম্পিউটারের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদেও অবদান রয়ে গেছে। উনি যদি এ্যালগরিদম তৈরীর পদ্ধতিটা আবিস্কার না করতেন তাহলে হয়তো বর্তমানে কম্পিউটার আবিস্কার নাও হতে পারতো।

তথ্যসূত্র:

উইকিপিডিয়া

Wednesday, May 9, 2018

ইসলামের ইতিহাস: বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান (পর্ব-গণিত)

বর্তমান বিশ্বে মুসলমানগণ খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তাঁরা মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এসব বিষয়ে অমুসলিমদেরই নাকি অবদান। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার ইতিহাসটা কি? এটা মুসলমানদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আর এমন কিছু ্ইতিহাস নিয়েই আজকের এ লেখা। মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।
বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ছিল মুসলমানদের অনেক অবদান। বিশেষত বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের ছিল সবচেয়ে বেশি অবদান। মুসলমান বিজ্ঞানীরা মনে করতেন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এ তিনটি শাখার উপর জ্ঞ্যান অর্জন করা আবশ্যক। এ তিনটি শাখা হচ্ছে প্রথম- মহাকাশ বিজ্ঞান, দ্বিতীয়- গণিত, তৃতীয়- চিকিৎসা বিজ্ঞান।
মহাকাশ বিজ্ঞান প্রয়োজন- চাঁদ এবং সূর্যের হিসাব নিকাশ বুঝতে। যেহেতু চাঁদের হিসাবটা বিশেষ বিশেষ দিন এবং বিশেষ বিশেষ মাস বের করা প্রয়োজন। আর সূর্যের হিসাবটা নামাযের ওয়াক্ত এবং অন্যান্য বিশেষ ওয়াক্ত বের করার জন্য প্রয়োজন।
আর গণিতটা প্রয়োজন- গণিত ছাড়াতো মহাকাশ বিজ্ঞান চিন্তাই করা যায়না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করাও সুন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য হিসাব করতে গণিত লাগে। আবার ফারায়েজের মাসয়ালা অর্থাৎ সম্পত্তি বন্টনের জন্যও গণিত প্রয়োজন। আবার মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নামায শেষ হওয়ার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর।” কোথাও যেতে হলে ম্যাপের দরকার। ম্যাপটা হলো ভূগোলের অংশ আর ভূগোলটা জ্যামিতির অংশ, জ্যামিতিও ওই গণিতের অংশ। ঐ আবার গিয়ে গণিতই লাগে।
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানটা প্রয়োজন, কারণ চিকিৎসা করা সুন্নত। সুতরাং এ সুন্নত পালনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করার প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা না করা হয় তাহলে চিকিৎসার সুন্নতটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর একটা সুন্নতকে বিলুপ্ত করার মতো কবীরা গুণাহতো আর কিছু হতে পারেনা। এছাড়াও জান বাঁচানোতো ফরয। সূতরাং সে ফরয আদায়ের জন্যও তো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞান যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু মুসলমানরা মহাকাশ বিজ্ঞানটা শেখার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানটাও চর্চা করতেন। আবার যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে রসায়ন একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত সেহেতু মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানটা শেখার জন্য রসায়নটাও চর্চা করতেন। যার কারণে এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে মুসলমানদের অনেক বেশি অবদান ছিল। এ পাঁচটা বিজ্ঞানের শাখার ইতিহাস পড়লেই এগুলো জানা যাবে।
আমরা তাহলে দেখতে পারলাম- গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ পাঁচটা শাখার উপর মুসলমানদের খুব বেশি অবদান ছিল।  কি ধরণের অবদান ছিল সে বিষয়েও আমাদের  জানা প্রয়োজন। যেমন-
গণিতে মুসলমানদের অবদানসবচেয়ে বেশি । আর গণিতের শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার। যেমন- প্রথমেই যেটা আসে সেটা হচ্ছে, আমরা যে সংখ্যা গুণি, ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯।   এই সংখ্যার যে এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ (১০) হয়; এটাই মুসলমানদের আবিষ্কার। এটা আবিষ্কার করেছেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী। উনিই প্রথম বলেছেন যে, এক এর পরে শূণ্য দিলে দশ হয়। এর আগে যেগুলো ছিল ওগুলি অনেক কঠিন ছিল। যেমন- রোমান সংখ্যা। তাদের সংখ্যা ছিল এক, পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ, এক’শ, পাঁচ’শ, এক হাজার, পাঁচ হাজার এরকম সংখ্যা। এগুলোর সাথে যোগ বিয়োগ করে আমি যেটা চাই সেটা বানিয়ে নিতে হতো। আর ইন্ডিয়ান সংখ্যাটা যেরকম ছিল- এক থেকে নয় পর্যন্ত নয়টা সংখ্যা, আবার দশ থেকে নব্বই পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা, আবার একশ থেকে নয়শ পর্যন্ত আরো নয়টা সংখ্যা। এরকম অনেক সংখ্যা। তো ইন্ডিয়ান সংখ্যা কিছুটা সোজা হলেও সংখ্যা এতো বেশি যে সংখ্যা মনে রাখতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মূসা আল খারিজমী উনি সুন্দর একটা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন যে, একের পর শূন্য দিলেই দশ হয়ে যায়। দশ সংখ্যাই অংক শেষ।
তারপরে আবার বীজ গণিত। এটাও মূসা আল খারিজমী উনারই আবিষ্কার। উনাকে অবশ্য মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গণিতবীদ হিসেবে ধরা হয়। এই আধুনিক বীজ গণিত যেটা, এটা উনিই আবিস্কার করে দিয়ে গেছেন। এর আগে যে বীজ গণিত ছিল সেগুলো এতো জটিল যে, আসলে বুঝাটা খুবই কঠিন। উনি যেটা আবিস্কার করে দিয়েছেন এটা খুবই সোজা এবং এখ পর্যন্ত এটাই চলে আসতেছে। বীজ গণিত ইংরেজী হচ্ছে এ্যালজেবরা। এ শব্দটাওতো আগে থেকে আসছে। মূসা ইবনে খারিজমী যে বইটা লিখেছিলেন সেটা হচ্ছে, ‘কিতাবুল জাবির ওয়াল মুকারাবা’। ঐ আল জাবিরটাকেই পরে তারা বানিয়ে ফেলছে এ্যালজাবরা(algebra)।
তারপরে দ্বিঘাত সমীকরণ; এটাও আবিস্কার করেছেন মুসলমানরা। তারপরে দ্বিপদী উপপাদ্য; এটাও প্রথম দেন মুসলমানরা। আবু বক্বর ইবনে হুসাইন আল কারাজি প্রথম এই দ্বিপদী উপপাদ্যটা দেন। পরবর্তীতে ওমর খাইয়াম আবার এই দ্বিপদী উপপাদ্যটার উপর আরো কাজ করেন এবং উনি এই দ্বিপদী উপপাদ্যের মাধ্যমেই যেকোন সংখ্যার যেকোন তম রুট বের করার একটা পদ্ধতি বের করেন। পরবর্তীতে পদ্ধতিটা হারিয়ে যায় তবে উনি যে এই পদ্ধতিটা বের করেছিলেন এটা অন্যান্য মুসলমান বিজ্ঞানীদের বইয়ে এই পদ্ধতিটা পাওয়া যায়। আর বীজগণিতের উপর যত অবদান সবই মুসলমানদের। যেমন বীজ গণিতের মধ্যে ‘পাওয়ার’এর যে সিস্টেমটা; এটাও মুসলমানদেরই আবিস্কার। আবু কামিল নামে একজন মুসলমান গণিতবিদ ছিলেন উনি এটা প্রথম চালু করেন। পাওয়ার, রুট এগুলোর সিস্টেম। তারপরে অংকের যে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এই চিহ্ণগুলিও মুসলমানদেরই দেয়া। এই চিহ্ণগুলি আবিস্কার করেছিলেন, আবুল হাসান ইবনে আলী কালাসাদি।
তারপরে ত্রিকোণমীতি; এটার উপরেও মুসলমানদের অনেক অবদান। রোমানরা ত্রিকোণমীতি প্রথম আবিস্কার করে কিন্তু রোমানরা ত্রিকোণমীতির যে ব্যাখ্যা দিত, সে ব্যাখ্যা শুনে মানুষ ত্রিকোণমীতি বিমুখ ছিল। পরবর্তীতে মুসলমান একজন গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে জাবির আল হারানী ওয়াল বাত্তানী তিনি প্রথম ত্রিকোণমীতি সম্পর্কে সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। যারফলে আবার সবাই ত্রিকোণমীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। উনি অনেকগুলো ত্রিকোণমীতির ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন একটা ফর্মুলা আছে ‎ten=sin/cos আবার ‎ten এর টেবিলটাও মুসলমানদের আবিস্কার করা।এটা আবিস্কার করেন আবু জাফর মুহম্মদ মূসা আল খারিজমী।
তারপরে এ্যালগরিদম তৈরী করার পদ্ধতিটাও মুসলমানদেরই করা। আবু জাফর মুহম্মদ মূসা ইবনে আল খারিজমী প্রথম এটা আবিস্কার করেন। এই এ্যালগরিদমের ফর্মুলাটা প্রয়োগ করেই কম্পিউটারের ক্যালকুলেশনের লজিকটা তৈরী করা হয়। এক কথায় আসলে বর্তমানে কম্পিউটারের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদেও অবদান রয়ে গেছে। উনি যদি এ্যালগরিদম তৈরীর পদ্ধতিটা আবিস্কার না করতেন তাহলে হয়তো বর্তমানে কম্পিউটার আবিস্কার নাও হতে পারতো।
পোষ্ট পড়ার জন্য ,সবাইকে অনেক অনেক শুকরিয়া।

Tuesday, January 9, 2018

কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিত কেমন ছিল?






সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল।তখন মানুষ মহাবিশ্ব,পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না। এই যেমন-
সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,
১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।
৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।
৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।
৫. বাচ্চার লিঙ্গের জন্য মা দায়ী।
৬. গাছের লিঙ্গ নেই।
৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা যাক।

১। আকাশের খুটিঃ
সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান খুটি নেই।

"তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)

আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।

২। মহাবিশ্বের আদি অবস্থাঃ

আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় একত্রে ছিল।চলুন দেখি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে-
"অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল স্বেচ্ছায় আসলাম।" (সূরা হামিম আস সিজদাহ : ১১)।

কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো!

৩।মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতাঃ

"আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী" (সূরা জারিয়াত : ৪৭)

মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই কিছুদিন আগে প্রমানিত হয়েছে। বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে যাচ্ছে।

Tuesday, October 10, 2017

লবণ ও লবণের শ্রেণিবিভাগ ।



লবণঃ কোন অজৈব এসিডের অণুতে উপস্থিত হাইড্রোজেন পরমাণু বা পরমাণুগুলোকে আংশিক বা 
সম্পুর্নরূপে কোন সক্রিয় ধাতু বা ধনাত্মক যৌগমূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত করলে যে যৌগ উৎপন্ন হয়
,তাকে লবণ বলে।যেমন ZnSO4 ,NH4Cl,NaCl,KNO3 ইত্যাদি।

  
লবণের শ্রেণিবিভাগঃ অজৈব লবণগুলোকে এদের গঠন অনুসারে নিম্নোক্ত ৬ টি শ্রেনিতে বিভক্ত করা যায়।যথাঃ-

১।পূর্ণ লবণ : NaCl, KNO3, ZnSO4, NH4Cl, CaCO3, Ca3(PO4)2

২।অম্লীয় লবণ : NaHSO4, Ca(HCO3), Na2HPO4 ইত্যাদি

৩।ক্ষারকীয় লবণ : CuCO3, Cu(OH)2 ইত্যাদি

৪।যুগ্ম লবণ : K2SO4.Al2(SO4)3.24H2O ফিটকিরি( দুটি পূর্ণ লবণ থেকে উৎপন্ন হয়)

৫।মিশ্র লবণ : NaKSO4 , Ca(OCl)Cl ব্লিচিং পাউডার (এতে ২টি ধনাত্মক বা ২ টি ঋণাত্মক মূলক থাকে)


৬।জটিল লবণ : k4[Fe(CN6)] (পটাশিয়াম ফেরো সায়ানাইড)

মিশরের পিরামিড ও মমি রহস্য


বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হল পিরামিড। আসলেই আশ্চর্যকর নির্মাণকৌশলসমৃদ্ধ এক স্থাপনা এই পিরামিড পিরামিড ও তার নির্মাণশৈলী নিয়ে যুগ যুগ ধরে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। পিরামিডের ভিতরের দেয়ালে আঁকা নানা রকমের ছবি, চিত্রলিপিতে লেখা ধর্মসংগীত আর দেয়ালে খোদাই করা প্রাচীন লিপি উদ্ধার করে এ সম্পর্কে সঠিক খবর জানার চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি- ঠিক কী কৌশলে তখনকার দিনে সুউচ্চ পিরামিডগুলো তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এতটুকু অবশ্যই জানা গেছে যে,  পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে এতই নিঁখুতভাবে এগুলো তৈরি যে একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝে এক চুল পরিমাণ ফাঁক নেই কারো কারো মতে, নির্মাণাধীন পিরামিডের এক পাশ থেকে মাটি বা পাথরের ঢাল তৈরি করে তার ওপর দিয়ে ভারী পাথর টেনে টেনে তুলে পিরামিড বানানো হয়েছে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই এ মত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মত-পিরামিড যত উঁচু হবে, ঢাল তত প্রশস্ত করতে হবে। এভাবে পিরামিডের চূড়া পর্যন্ত পৌঁছতে ১৩ মাইল লম্বা ঢাল বানাতে হবে, যা অসম্ভব। আবার আরেক মতানুসারে, পিরামিড বানানো হয়েছে ধাপে ধাপে চারপাশ দিয়ে ছোট ছোট ঢাল বানিয়ে। অপর একটি মতে, পিরামিডের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। পরে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বলা বাহুল্য সবকিছুই ধারণা মাত্র। এর প্রকৃত রহস্য অজানা। এর অভ্যন্তরীন নকশাও ছিল দারুণ


                                                        পিরামিডের অভ্যন্তরীন গঠন-কৌশল

পিরামিড তৈরি করার কারণ হিসেবে নানারকম কাহিনী প্রচলিত আছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনী
হচ্ছে, প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। তারা অনন্ত জীবন নিয়ে সুর্যের প্রহরী হয়ে ফিরে আসেনকিন্তু যদি তাদের দেহে পচন শুরু হয় বা কোনও আঘাত লাগে তাহলে তারা অনন্ত জীবন থেকে বঞ্চিত হবেন। তাতে সুর্য ধ্বংস হবে আর পৃথিবীতে নেমে আসবে মহাপ্রলয়। তাই মৃত্যুর পর তাদের দেহকে মমি বানিয়ে পচন রোধ করে নিরাপদ ও দুর্ভেদ্য স্থানে রাখার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিল পিরামিড 

আবার অনেক ইতিহাসবেত্তাদের মতে, জীবনটাকে যাতে উপভোগ করা যায়, সে চিন্তায় মিশরীয়রা অস্থির থাকতো। ব্যক্তির গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে গুরুত্ব আরোপ করা হতো এ ব্যাপারে। ব্যক্তি যতো গুরুত্বপূর্ণ হতো এ কাজে গুরুত্ব ততো বেশি বেড়ে যেতো। পরবর্তী জীবনের আরাম-আয়েশের জন্য স্বভাবতই ফারাওদের ব্যাপারেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। ক্ষমতায় আসা নতুন ফারাওয়ের প্রথম কাজ সম্পন্ন করা। প্রত্যেকেই চাইতেন বিশাল আয়তনের হোক তার সমাধিক্ষেত্র। অনেকেই মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সমাধিক্ষেত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যেত। এসব সমাধিক্ষেত্র আসলে মৃতের আত্মার ঘর। মিশরীয়রা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। এ কারণেই মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করতো তারা। আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিষ। তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সাথে দিয়ে দিতো তারা। সমাধিস্তম্ভ প্রধানের দায়িত্ব ছিলো দস্যুদের হাত থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করার। কিন্তু কবরে সমাধিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ বিত্ত আর ক্ষমতাবান ছিল তা জাহিরের উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হতো পিরামিড। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সাথে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধন-সম্পদ। সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবানসামগ্রী দেয়া হতো। এমনকি, নিন্মশ্রেণীর মানুষদের কবরেও সামান্য পরিমাণ হলেও কিছু খাবার রেখে দেয়া হতো।


 মিশরীয়দের অনুকরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পিরামিড তৈরি করলেও মিশরের গীজা শহরের পিরামিড চারটিই বেশি জনপ্রিয়। 

               


        

                                                 
রাজার নাম
পিরামিডের নাম
স্থান
উচ্চতা (মিটার)
খুফু
               
দ্য গ্রেট পিরামিড
গীজা
১৪৬.
খাফ্রা
দ্য খাফ্রা
গীজা
১৪৩.৫
মেনকাউরে
পিরামিড অব মেনকাউরে
গীজা
৬৫.
হারমাইস
স্ফিংস
গীজা
৭৩.১৫২







এই পিরামিডের জন্য মমি তৈরির প্রক্রিয়াও কিন্তু সহজ ছিলনা!

মমি হলো একটি মৃতদেহ যা জীবের শরীরের নরম কোষসমষ্টিকে জলবায়ু (বায়ুর অভাব অথবা অনাবৃষ্টি অথবা মৌসুমীয় অবস্থা) এবং ইচ্ছাকৃত কারণ (বিশেষ দাফন প্রথাগুলো) থেকে রহ্মা করে। অন্যভাবে বলা যায়, মমি হলো একটি মৃতদেহ যা মানবিক প্রযুক্তির মধ্যে অথবা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস এবং হ্ময়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রহ্মা করে।
মমি শব্দটি মধ্যে যুগের লাতিন শব্দ mumia থেকে এসেছে, একে পারস্য ফার্সি ভাষা mūm (موم) থেকে আনা হয়েছে যার অর্থ দাহ্য খনিজ পদার্থবিশেষ , অদ্রি (bitumen) 




কোনো মরদেহকে মমি করার জন্য সবার আগে সেটিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখা প্রয়োজন। সাধারণত পানির উপস্থিতিতেই ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। সে কারণে মমি করার জন্য মরদেহকে দ্রুত পানিমুক্ত করা হতো যাতে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ভিড়তে না পারে।
মমি তৈরি করার পদ্ধতিকে মোটামুটি দীর্ঘমেয়াদি বলা চলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুগন্ধি কেমিক্যাল দিয়ে একটি দেহ মমি করতে প্রায় ৭০-৮০ দিন লেগে যেত।


*প্রথমে রাজার শরীর পাম-ওয়াইন ও নীল নদের পানি দিয়ে ধুয়ে শরীরের ভিতর থেকে পচনশীল দ্রব্য(যেমনঃ হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ইত্যাদি) বের করে ফেলা হত এবং অভ্যন্তরীণ নাড়ি-ভুঁড়িগুলো বের করে ফেলে দেওয়া হতো। থাকত শুধু চামড়া আর হাড়গোড় এরপর পাথর ঢোকানো হত। এরপর লবণ দ্বারা তাদের ঢেকে দেয়া হত যাতে করে শরীরের পানি বেরিয়ে গিয়ে শরীর শুকিয়ে যায়।




*এরপর লিনেন নামক কাপড় দ্বারা তাদের শরীরটিকে পেঁচানো হযত ।লিনেন কাপড়কে তারা পবিত্র কাপড় মনে করত।




*এরপরের ধাপে মমির দুই হাতের মাঝে একধরনের রক্ষাকারী মন্ত্র লিখে দেওয়া হত। তারা মনে করত যে এই মন্ত্র তাদের রাজাকে খারাপ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।


 
*তারপর শরীরকে আবার লিনেন দিয়ে মুড়ে বিশেষ ফিতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হত ।



*
এরপর শেষধাপে আবার লিনেনে মুড়ে বুকের উপর ‘আসিরিস’ নামক দেবতার 
প্রতীক লাগিয়ে দেওয়া হত।

     
*এভাবে মমি তৈরি করে তাদের একটি বিশেষ শক্ত ও মজবুত বাক্সে রেখে পিরামিডে স্থাপন করা হত।

মমির অভিশাপঃ
১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবরে আমেরিকার "টাইমস" পত্রিকা ছাপিয়েছিল অত্যন্ত   রহস্যময় এক কাহিনী।

  ল্যুক্সরে (আমেন রা এর সমাধি)


খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে মারা যান ‘প্রিন্সেস অভ আমেন-রা’। নীলনদের পাশে ল্যুক্সরে তাঁর সৎকার করা হয়। উনিশ শতকের নব্বই শতকের শেষ দিকে চার জন ইংরেজকে ওই রাজকুমারীর মৃতদেহসহ একটি মমি েনার জন্য আহ্বান জানানো হয়। উৎসাহী ইংরেজদের একজন বেশ কয়েক হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে বিক্রেতার কাছ থেকে মমিটি কেনেন এবং সেটিকে নিয়ে আসেন তাদের হোটেলে। কয়েক ঘন্টা পর মরুভূমির দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায় ওই ক্রেতা ব্যক্তিকে। তিনি আর কখনও ফিরে আসেন নি।পরেরদিন আরেকজন ইংরেজ এক মিশরীয় ভৃত্য কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে এমন ভাবে আহত হন যে তার একটি হাত কেটে ফেলতে হয়।
তৃতীয় ব্যক্তি দেশে ফিরে আসেন, কিন্তু দেখেন যে, ব্যাংকে গচ্ছিত সমস্ত অর্থ লোপাট হয়ে গেছে অন্য কারও জালিয়াতির মাধ্যমে।
চতুর্থ ব্যাক্তি পড়েন প্রচন্ড অসুখে। চাকুরী চলে যায় তার। শেষমেশ তিনি রাস্তায় দিয়াশলাই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এদিকে অনেক ঝামেলার পর মমিটি পৌঁছে যায় ইংল্যান্ডে।

কিন্তু তবু অভিশপ্ত অধ্যায়ের শেষ হয়নি। ওই কফিনের সাথে সর্ম্পকযুক্ত যে কোন মানুষের ভাগ্যে জুটেছিল দূর্ঘটনা বা মৃত্যু। এমনকী ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত মমিটির একজন দর্শনার্থীর ভাগ্যেও জুটে চরম দুর্দশা। ওই দর্শনার্থী মহিলা চরম তাচ্ছিল্যভরে একটি ময়লা পরিষ্কার করার কাপড় দিয়ে মুছেছিলেন কফিনে অঙ্কিত রাজকুমারীর মুখচ্ছবি। কয়েকদিন পর তার সন্তান মারা যায় হাম রোগে।
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ মমিটিকে বেসমেন্টে সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এক সপ্তাহের মাঝেই মমি সরানোর কাজে অংশগ্রহনকারী একজন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই কাজের তত্বাবধায়ককে তার অফিসের ডেস্কের উপর মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বভাবতই ব্যাপারটি সংবাদপত্রের নজরে আসে। একজন ফটো সাংবাদিক ছবি তুলে ডেভেলপ করে দেখতে পান যে, রাজকুমারীর মুখের বদলে এক বীভৎ চেহারা। জানা যায় যে ওই সাংবাদিক গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

প্রায় দশ বছর ধরে ঘটতে থাকে এইসব ঘটনা-উপঘটনা। চূড়ান্তভাবে মমিটিকে বিক্রি করা হয় একজন সৌখিন সংগ্রাহকের কাছে। বিচিত্র রকমের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির পর মমিটিকে তিনি নির্বাসন দেন নিজ বাড়ীর চিলেকোঠায়। অভিশপ্ত ঘটনার পরও একজন মার্কিন প্রত্নতত্ববিদ কিনে নেন মিশরীয় রাজকুমারীর মমি। নিউইর্য়কগামী একটি জাহাজে বুক করেন ওই মমিটি, নিজেও ওঠেন ওই জাহাজে। বলুন তো জাহাজটির নাম কি?


   সেই জাহাজটির নাম ‘টাইটানিক'


নির্দ্বিধায় পিরামিড রহস্যের এক বিশাল ভান্ডার। কিন্তু একথাও সত্য যে জ্ঞানই রহস্যের ইতি ঘটায়। তাই পিরামিড সম্পর্কে জেনে রহস্যময় পিরামিডের রহস্যের ইতি টানার দায়িত্ব আমাদেরই।


 

Blogger news

Blogroll

About